ভোলায় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৬ পিএম, ২০ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৫৪ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ভোলার বিভিন্ন বাজারের নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে,সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। লাগামহীন ডিম ও কাঁচামরিচ। এছাড়া চালসহ বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও।
ক্রেতারা বলছেন আমরা নিত্যপন্য ও চাল নিয়ে কঠিন দিন পার করছি, আমাগো কপালে এত দামী ডিম,মাছ ও তরকারী নাই।
গতকাল (১৯ আগষ্ট) শনিবার সরজমিন বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সাথে আলাপ কালে ৫০ উর্ধ লালু নামের এক ক্রেতা এই উক্তি করেন।
তিনি ক্ষোভ করে বলেন, ডিমের হালি-৬০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি-২০০,কাচাঁ মরিচ-৪০০, কাকরোল-১২০, পটল-৮০, মুলা-৮০, করলা-১০০, ঝিঙ্গা-৮০, টমেটো-২০০, লেবু হালি-৬০, ধনে পাতা-৫০০, শশা-৮০, কুমড়া-৬০, ফুল/পাতা কপি-১২০,গাঁজর-২৬০, আলু-৫৫, বেগুন-১০০, পেপে-৪০, লাউ-ছোট/বড়-১০০ থেকে ২০০, পেঁয়াজ-১২০, রসুন-২৬০, চায়না আদার-২৬০ টাকার নিচে বেচেনা। একই অবস্থা চাল ও মাছের বাজারে। প্রকারভেদে প্রতিকেজি মোটা চাল-৬০, চিকন চাল-৭৫ টাকায় বেচে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম-১৭৫,কোয়ালিটি-১৬৫ টাকা লিটার। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে সব প্রকার নদী ও সামুদ্রিক মাছের দাম। পুকুরে চাষ করা মাছসহ মুরগী,গরু, খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা। গরুর দুধের লিটার-৯০ বিক্রি হয়।
ক্রেতা ইয়ামিন, আলাউদ্দিন, আল আমিন জানান, বাজারের নিত্যপণ্যের দাম কোটিপতিরা ছাড়া সবার সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাচাঁবাজারসহ দিন দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে, আমরা ক্রয় করতে পারছিনা। তারা আরও জানান, ভোলার নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করতো তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতো বলেও জানান তারা।
সবজি বিক্রেতা কাশেম, হাসেম জানান, সব মালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাজারে মালের সরবরাহ কমের কারণে দাম বেশি। বিক্রেতারা আরও বলেন, আড়ত থেকে বেশী দামে কিনে আনি সামান্য লাভে বিক্রি করি, আমরা দিন শেষে ৩০০ টাকাও লাভ করতে পারিনা, অনেক দিন লোকসান দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাই। তারপরও কাস্টমারের সঙ্গে আমাদের মনোমালিন্য হয়। তবে আমরা খুচরা বিক্রেতারা কোনো সিন্ডিকেট করি না। আড়ত থেকে কেনা দামের ওপর নির্ভর করে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে আড়তদারেরা জানেন,আমরা জানি না।
সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অস্বীকার করে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর দোষ চাপিয়ে আড়তদাররা বলছেন, বৃষ্টিতে ভোলায় উৎপাদিত অনেক সবজি নষ্ট হওয়ায় বাজারে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে যশোর,চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা কাঁচামাল মাল কিনে এনে ভোলার বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তাদের দাবি, ভোলার বাজারে স্থানীয় পণ্যের যোগান বাড়লে সংকট কেটে যাবে, একইসঙ্গে দামও কমবে।
ভোলা চালের খুচড়া ব্যবসায়ী মোঃ ইলিয়াস জানান, আমরা আড়তদারদের কাছ থেকে প্রতিদিন সকালে কয়েক প্রকারের ৫/৭ বস্তা চাল কিনে এনে প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৫০ পয়সা লাভে বিক্রি করি। কোন দিন ৪ থেকে ৫ শত টাকা লাভ হয়, আবার কোন দিন ২ থেকে ৩ শত টাকা লাভ হয়। এতে আমাদের সংসার চলেনা। ভোলার বড় আড়তদার মোঃ আলমগীর মিয়া জানান, নোয়া পাড়া, মীরকাদিমসহ বিভিন্ন মোকামে মিলারেরা চাল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, মোকাম থেকে এক ট্রাক চাল আনতে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। মিলারেরা এক ট্রাক চাল দিতে ২-৩ দিন সময় পার করে দেয়। তাতে চালের খরচ বেশী পরে, আর ভোক্তারা বেশী দামে চাল কিনতে হয়। প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় মিলারেরা নিজেদের ইচ্ছামত চাল উৎপাদন করে বেশী দামে বিক্রি করে। মাছ, মুরগী ও মাংস বিক্রেতারা জানান, বাজারের ইজারাদার সব কিছুর উপর বেশী খাজনা বসিয়েছেন, তাই মাছ ও মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে।
তবে ভোলা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা সোহেল জানান, আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাজার মনিটরিং চলমান রয়েছে। এরপরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করেন তাহলে কৃষি বিপণন আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দিনকাল/এসএস