শর্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায় আইএমএফ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:১৫ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আইএমএফ (আন্তজার্তিক অর্থ তহবিল) বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের আগে সরকারের কাছে শর্ত বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেই তারা ঋণের প্রস্তাব সংস্থার নির্বাহী বোর্ডে নিয়ে যাবে। ওই বোর্ডের অনুমোদনের পর ঋণের অর্থ ছাড় করবে। তবে ইতোমধ্যে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মন্দা ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে দুটি খাতে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে গত জুলাইয়ে চিঠি দিয়েছে। এ ঋণের ব্যাপারে আলোচনা করতে গত ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটির একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে গেছে। ওই সময়ে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছে।
এসব বৈঠকে বৈদেশিক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে। ওইসব শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে। এর ভিত্তিতে আইএমএফ মিশন একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তাদের প্রধান কার্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ে জমা দিয়েছে। সেটি তারা পর্যালোচনা করে শর্তের বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক অঙ্গীকার চায়।
এ বিষয়ে গত মিশনের পক্ষে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। তারা সর্বোচ্চ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু আইএমএফ এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শর্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি চায়। এ লক্ষ্যে আইএমএফের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিসেস অ্যান্তইনেত সায়েহ আগামী ১৪ জানুয়ারি ঢাকা আসছেন। তিনি ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন। ওই সময়ে তিনি আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ জানুয়ারি বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে চেয়েছেন। অনুমতি পেলে সেখানে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশে তার আলোচনা শেষ হলে তিনি ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে একটি প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভর করেই আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ঋণ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
আইএমএফের আগের মিশনটি ছিল নিচের স্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করতে পারেনি। এ কারণে আইএমএফ উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা পাঠাচ্ছেন যিনি ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নিতে পারবেন।
সূত্র জানায়, এবার ঋণের জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত আরোপ করেছে তার মধ্যে বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেছে সরকার। আরও যেসব শর্ত বাকি রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়ন ও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার অঙ্গীকার চায় আইএমএফ। তবে আইএমএফ থেকে অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়া রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা করা হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিকাশে ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করার বিষয়ে নিশ্চয়তাও চাইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশে ঋণের বিষয়ে আলোচনার সময়ে তারা এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।
জানা গেছে, আইএমএফ ছয় মাস পর পর ঋণের কিস্তি ছাড় করবে। কিস্তির ছাড়ের আগে আইএমএফ সরকারের ওপর নতুন কোনো শর্ত আরোপ করার বিধাণও ঋণ চুক্তিতে থাকে। যে কারণে এক কিস্তির অর্থ ব্যবহারের পর অন্য কিস্তির অর্থ ছাড়ার আগে নতুন শর্ত আরোপ করছে। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে আইএমএফ এসব শর্ত আরোপ করে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জরুরি প্রয়োজনে আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ নিয়েছে। কিন্তু পরে পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণে আসার পর আইএমএফের শর্ত মানা থেকে সরে আসে। ফলে পরবর্তী কিস্তি আর নেয় না। এতে আইএমএফও শর্ত বাস্তবায়নে কঠিনভাবে আর চাপ দিতে পারে না।
২০২০ সালে করোনার সময়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার জন্য আইএমএফ থেকে সরকার ৭২ কোটি ডলার ঋণ নেয়। ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড়ের আগে আগের কিস্তির অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তা জানতে চায়। এগুলো জানালে তারা ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড় করবে বলে শর্ত আরোপ করে। কিন্তু সরকার থেকে আইএমএফের ঋণের অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। ফলে আইএমএফও ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড় করেনি।
এবার ওই রকম অভিজ্ঞতা এড়াতে আইএমএফ সতর্ক হয়েছে। যে কারণে তারা ঋণের শর্ত ও সংস্কার চলমান রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয়ে নিশ্চিত হতে চায়।