চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৫ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫০ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আমদানিতে যে পরিমাণ খরচ করতে হচ্ছে তার চেয়ে রফতানি আয় কম হওয়ায় অর্থবছরের শুরু থেকেই বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৫৯ কোটি ডলার। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতিও ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ (৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে)-এর পরিমাণ এক লাখ আড়াই হাজার কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ। অক্টোবর মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২৯৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৪৩৩ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৯৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে অক্টোবর শেষে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৩৮৩ কোটি ডলার।
ওভারঅল ব্যাল্যান্স : সামগ্রিক লেনদেনেও (ওভারঅল ব্যাল্যান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। অক্টোবর শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮৭ কোটি ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ১৩৪ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৭১৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ৭০৫ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ০৩ শতাংশ। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর ১১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ১৫৪ কোটি ডলারে উঠেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে আলোচিত দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থায় নেমেছে। অর্থবছরে প্রথম চার মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ২ কোটি ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।