শঙ্কাজনকভাবে কমছে ডলার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩২ পিএম, ১ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
আশঙ্কাজনকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ। গতিহীন হয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের উৎসগুলো। হুন্ডি প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে যাচ্ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে রফতানি আয়ও কমে গেছে। পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের বিদেশি ঋণের ছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে পড়েছে ভাটা। বৈদেশিক মুদ্রার উৎসগুলোর এ গতিহীনতার কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার জোগান দিয়ে জ্বালানি তেল, অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যয় মেটানো হচ্ছে। গত ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) শুধু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ছয় বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নিম্নগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে নেমেছে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে এ রিজার্ভ আরো কমে ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার উৎসগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসায় আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নতুন এলসি খুলছে না। যেটুকু খোলা হচ্ছে তাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় সামনে পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেবে। ইতিমধ্যে ডাল, চিনি, শিশুখাদ্য যেমন গুঁড়া দুধ ইত্যাদি চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় সামনে রফতানি আয়ের ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ : বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্সের মন্থর গতি কাটছে না। এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে; কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ২৫ দিনে (১-২৫ নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। তবে যে হারে রেমিট্যান্স আসছে তা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে ১৬০ কোটি ডলার পার হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। হুন্ডি প্রতিরোধে ইতিমধ্যে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠন করা হয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবের টাকা উত্তোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করে বিএফআইইউ।
বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈধ পথে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।