ডলার ঘাটতির কারণে গরম মসলার বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:২০ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সাধারণত ঈদ বা বড় কোনো উৎসব ঘিরে দাম বাড়ে মসলার। কিন্তু বর্তমান ডলার ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গরম হচ্ছে গরম মসলার বাজার। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানির ঋণপত্র (এলসি) না খুলতে পারার কারণে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম বেড়েছে।
তারা বলছেন, এক মাসের ব্যবধানে বাজারে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ও কিশমিশের দাম অনেকটা বাড়তি। আর ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা কমে গেলে বা বন্ধ হলে মসলার বাজার আগ্নেয়গিরির মতো গরম হয়ে যাবে।
সরেজিমনে সৈয়দপুর রেলওয়ে বাজার মসলাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বেশিরভাগ মসলার দাম বাড়তি। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ৬০-১০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ মসলা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার অন্যতম আমদানিকারক সৈয়দপুরের নুর ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক নুর ইসলাম বলেন, ব্যাংকে ডলার সংকটের কারণে এলসি এখন খুব কম হচ্ছে। আমি নিজেই জিরা আমদানি করতাম। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এখন তেমন করতে পারছি না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও মসলার দাম বাড়তি রয়েছে যে কারণে বাজারে সব ধরনের গরম মসলার দামই ঊর্ধ্বমুখী।
এক মাস আগে প্রতি কেজি জিরার দাম ছিল ৩৮০-৪০০ টাকা। বর্তমানে তা ৪৮০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০০ টাকার দারুচিনি ৩৪০-৪১০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কিশমিশের। ৩১০ টাকার কিশমিশ ৪৫০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও আরও বেশি দামে গরম মসলা বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্রেতা গরম মসলা অল্প পরিমাণে কেনায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শহীদ ডা. শামসুল হক সড়ক মসলাপট্টি ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। এ বাজারের মসলা বিক্রেতা আব্দুল গনি অ্যান্ড ব্রাদার্স। দোকানের স্বত্বাধিকারী নুর জানান, চট্টগ্রাম থেকে গরম মসলার বেশিভাগ এলসি হয়ে থাকে। সেখান থেকে মসলা আসে সৈয়দপুর। এখন এলসি কম হওয়ার কারণে যদি বন্দরে মসলা না আসে তাহলে দাম বাড়বেই।
গত ১০ দিনের ব্যবধানে সৈয়দপুরের বিভিন্ন খুচরা বাজারেও বেড়েছে বিভিন্ন মসলার দাম। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে গরম মসলার বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে জানান তিনি।
বাজারের মুদি দোকানি ইমরান হোসেন বলেন, গরম মসলার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই কেনা বন্ধ রেখেছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ গরম মসলা কিনছেন না। আবার যারা কিনছেন, তা পরিমাণে খুবই কম। মানুষের চাল, ডাল, আটা, তেল নিয়েই চিন্তা বেশি।
সৈয়দপুর বাজারের গরম মসলার পাইকারি ব্যবসায়ী এস এম ইশতিয়াক জানান, গত এক মাসের মধ্যে মসলার দরদাম ওঠানামা করছে। সব মসলায় কিছুটা দাম বেড়েছে। ভবিষ্যতে যদি আমদানিকারকরা আমদানি না করতে পারেন তাহলে মসলার বাজার আগ্নেয়গিরির মতো গরম হয়ে যাবে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি এক মাস আগে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি করেছিলেন ৪০০ টাকায়। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায়। একইভাবে ১২০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকার ছোট এলাচ এখন ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা ও বড় এলাচ ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন একই বক্তব্য অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ,
দারুচিনি ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং লবঙ্গের ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর দি বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, শুধুমাত্র সৈয়দপুরে ৩৪টিরও বেশি ব্যাংকের শাখা রয়েছে যেটি নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুরেও নেই। এসব ব্যাংকে এলসির পরিমাণ কমে গেছে। অনেক আমদানিকারক এখন ঠিকমত এলসি খুলতে পারছেন না। অনেক ব্যাংকই এলসি দিতে পারছে না। এ কারণে মসলাসহ আমদানিকারক প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে। তবে সরকার তা সমাধানের চেষ্টা করছে। খুব শিগগিরই সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।