চিনির পর এবার গমের দামে অস্থিরতা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:১৪ পিএম, ৩ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১১ এএম, ৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
চিনির দামে অস্থিরতা শেষ না হতেই এবার বাজারে গমের দামের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে দাঁড়ানো ঘোষণার দেওয়ার পর গত তিন দিনে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গমের দাম কেজিপ্রতি চার টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে এখন গমের তৈরি আটা-ময়দার দাম যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নতুন করে গমের দাম বাড়তে থাকায় আটা-ময়দার দাম বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে সংকটের সময়ে গত মঙ্গলবার গম নিয়ে তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। এই তিন জাহাজে রয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার টন গম। এস আলম, সিটি ও আকিজ গ্রুপ এই গম আমদানি করেছে। এর আগে গত মাসের শেষে আমদানি হওয়া এস আলম ও বসুন্ধরা গ্রুপের দুই জাহাজ টন গম খালাস হচ্ছে।
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ইউক্রেন থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গম আমদানি শুরু হওয়ায় বাজারে গম নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটতে শুরু করে। শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে আসার ঘোষণা দেওয়ায় আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে গতকাল বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কৃষ্ণসাগরের বন্দর দিয়ে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দেবে রাশিয়া। এর আগে গত শনিবার রাশিয়া শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়। এর পর বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়ে যায়।
গমের বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা শুরু হয় মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। যুদ্ধের পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গম আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কিন্তু গত ১৩ মে ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করে দিলে আমদানিও কমতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসের শেষে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শস্য চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগর দিয়ে গম রপ্তানি শুরু হয় গত আগস্ট থেকে।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের আমদানিকারকেরা গত অক্টোবর থেকে গম আমদানি শুরু করেন ইউক্রেন থেকে। রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে আসার আগে বন্দর দিয়ে দেশটি থেকে তিনটি জাহাজে ১ লাখ ৫৯ হাজার টন গম আমদানি করেছে এস আলম ও বসুন্ধরা গ্রুপ।
হঠাৎ রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় গত সোমবার থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম আবার বাড়তে শুরু করে। পণ্য লেনদেনের বাজার ‘শিকাগো বোর্ড অব ট্রেড-সিবিওটি’র ওয়েবসাইটে দেখা যায়, শনিবার রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণার পর সোমবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে ৭ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৩২৪ ডলারে ওঠে গমের দাম। সেই হিসাবে একদিনে কেজিপ্রতি গমের দাম দুই টাকা বেড়েছে বিশ্ববাজারে। বিশ্ববাজারের পর গমের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও।
বিশ্ববাজারে দুই ধরনের গম বিক্রি হয়। একটি সাধারণ আমিষযুক্ত নরম গম। আরেকটি উচ্চ আমিষযুক্ত শক্ত গম। সাধারণ কম আমিষযুক্ত গমের দাম সব সময় উচ্চ আমিষযুক্ত গমের দামের চেয়ে কম থাকে। সংকটের কারণে এখন দুই ধরনের গমের দামের ব্যবধান কমে আসছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন বা ভারত হচ্ছে সাধারণ কম আমিষযুক্ত গমের প্রধান উৎস। দেশে আমদানির ৭০ শতাংশই সাধারণ আমিষযুক্ত গম। উচ্চ আমিষযুক্ত গম আমদানি হয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববাজারে সাধারণ আমিষযুক্ত গমের উৎস দেশ সীমিত হয়ে গেলেও উচ্চ আমিষযুক্ত গমের সংকট নেই। দাম বেশি হলেও উচ্চ আমিষযুক্ত গম পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি বাড়লে সংকট থাকবে না।
দেশে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদার ৯০ শতাংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। গত কয়েক বছরে ৬০-৬২ লাখ টন করে গম আমদানি হয়েছে। রপ্তানিকারক দেশগুলোর বিধিনিষেধ ও ডলার–সংকটে ঋণপত্র খোলার জটিলতার কারণে এ বছর গম আমদানি অস্বাভাবিকভাবে কমেছে।
খাদ্যশস্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের এটিআর গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, সংকট সামাল দিতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্র খোলার জন্য ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে হবে। না হলে সংকট শিগগিরই কাটবে না।