ভারত থেকে পণ্য আমদানি ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন ও রফতানি ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪৪ এএম, ৩১ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্বদাতা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ বছরে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টনের বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ সময় ভারতে রফতানি হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন ও রফতানি ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন ও রফতানি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন ও রফতানি ৪ লাখ এক হাজার ১১৭ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন এবং রফতানি ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ৬ মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন। এ সময় রফতানি হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক ও বসুন্ধরা টিসু উল্লেখ্যযোগ্য। বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলছে। প্রতি বছর এ পথে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকা পণ্য রফতানি হয়ে থকে। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
জানা যায়, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি পণ্য আমদানি ইচ্ছে থাকলেও বন্দরের অবকাঠামোগত নানান সমস্যায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। লোকসানের মুখ্যে পড়ে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। এতে দিন দিন আমদানি কমে আসছে বন্দরটি দিয়ে। তবে আমদানি কমলেও রফতানি বেড়েছে এ বন্দরটি দিয়ে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যও আরো বাড়বে বলে সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি কমেছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫ টন পণ্য। একই অর্থবছর রফতানি বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ৮৪ হাজার ২২৭ টন পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি পণ্য থেকে শুল্ককর বাবদ লক্ষ্যমাত্রার বিপতে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল এক হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি দেখা গেছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন অবহেলায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানের শিকার হচ্ছেন তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কাক্সিক্ষত রাজস্ব। বন্দরকে নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেয়া হলে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব বলে অভিমত পোষণ করেন এ বাণিজ্যিক নেতা।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি কারকরা জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীদের দাবি রয়েছে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য রাখাতে চাহিদামতো জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে অবহেলায় পণ্য রাখতে হচ্ছে পণ্য। এতে রোদবৃষ্টিতে পণ্যের যেমন গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে তেমনি চুরির আতঙ্ক থাকছে। রয়েছে ক্রেন ও ফর্কক্লিপের সংকট। বারবার বলা সত্ত্বেও বন্দরের তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ দেখা যাচ্ছে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কেবল অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ পথে বাণিজ্য প্রসার ঘটছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ তেমন কঠিন কিছু হবে না।
ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার বড় একটি অংশ কেমিক্যাল ও খাদ্যদ্রব্যজাতীয় পণ্য। নিয়ম রয়েছে এসব পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে খালাসের জন্য কাস্টমস থেকে পণ্যের গুণগতমান পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমসে বিএসটিআই বা বিএসআই আরের কোনো শাখা না থাকায় সব ধরনের পণ্য পরীক্ষণ সম্ভব হয় না। ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে ২০ থেকে এক মাসেরও অধিক সময় লেগে যায়। এ দীর্ঘ সময় বন্দরে পণ্য আটকা থেকে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানে পড়েন তেমনি পণ্যের গুণগতমানও নষ্ট হয়। ব্যবহৃত হয় শিল্পকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার জানান, ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারিপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ এবং আরো জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা বন্দরের রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য প্রসারে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।