কিশোরগঞ্জে এমওপি সারের সঙ্কট, ৭৫০ টাকার সার এক হাজার ৪০০ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০২ পিএম, ১৬ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩৪ পিএম, ১০ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রাসায়নিক সার এমওপির (পটাস) তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ না করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিসিআইসি ডিলাররা দ্বিগুণ দামে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, সারের জন্য ডিলারদের কাছে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। এরপরও সার না পেয়ে ৭৫০ টাকা মূল্যের সার এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাগুড়া ইউনিয়নের মোজাহারুল ইসলাম নামে বিসিআইসির এক ডিলার কৃষকদেরকে সার না দিয়ে ট্রাকে করে বাইরে পাচার করার সময় ৪১৮ বস্তা সার আটক করেছে এলাকাবাসী। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে একজন করে বিসিআইসি ডিলার রয়েছে। এসব ডিলারদের মাঝে চলতি মাসে রাসায়নিক সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ডিলার প্রতি এমওপি ১৪ দশমিক ২০ টন, টিএসপি দুই দশমিক ২৫ টন ও ডিএপি ১০ দশমিক পাঁচ টন। এর বিপরীতে চার হাজার ৫০০ হেক্টর জমি আগাম ও নাবী জাতের আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকরা আগাম আলু চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু জমিতে সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে না পারায় আগাম আলুর চাষ বিলম্ব হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, সরকারিভাবে যে পরিমাণ সার বরাদ্দ দেয়া হয় তা আসার সাথে সাথেই হাওয়া হয়ে যায়। কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের গোডাউনে দিনের পর দিন ঘুরেও চাহিদার কিঞ্চিত পরিমাণ সার মিলছে না।
পুটিমারী ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষি আব্দুল কুদ্দুস জানান, এবার সাত বিঘা জমি আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে পটাস সারের জন্য ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন বিসিআইসি ডিলারের কাছে গিয়ে চাহিদা মতো সার পাইনি। সাত বিঘা জমিতে চাষের জন্য চার বস্তা পটাস সারের প্রয়োজন হলেও দেয়া হয়েছে মাত্র মাত্র এক বস্তা। বাকি তিন বস্তা সার দ্বিগুণ দামে খুচরা বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। মাগুড়া ইউনিয়নের কৃষক রহিদুল ইসলাম, সবুর আলীসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জমি প্রস্তুত করে দিনের পর দিন ঘুরেও সার পাচ্ছি না। অথচ ইউনিয়নের ডিলার মোজাহারুল ইসলাম বরাদ্দকৃত সার বেশি দামে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ৭৫০ টাকা মূল্যের পটাস এক হাজার ২০০ থেকেএক হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বাইরে থেকে বেশি দামে পটাশ কিনতে বাধ্য হওয়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিশোরগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, সরকারিভাবে যে সার বরাদ্দ হয় তা আগে ভাগেই ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়। অনেকেই বেশি করে সার নেয়ায় বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করে তা বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। মাগুড়া ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার মোজাহারুল ইসলামের কাছে বরাদ্দকৃত সার অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকবাসী যে সার আটক করেছে সেগগুলো বাইরে থেকে কিনে আনা। সেগুলো সরকারি বরাদ্দের নয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সঙ্কচের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সারের কোনো সঙ্কট নেই। বাজারে পর্যাপ্ত সার রয়েছে। কৃষকরা দিনের পর দিন ডিলারের কাছে ঘুরে সার পাচ্ছে না এবং খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বরাদ্দ আসার সাথে সাথে কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ করা হয়েছে। খুচরা বাজারে বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।