২৫ কোটি টাকা জমা দিয়েও গ্যাস পাননি ২২ হাজার গ্রাহক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৭ পিএম, ২ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার উত্তর ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক। নিজ বাড়িতে দুই চুলার গ্যাস-সংযোগের জন্য ২০১৫ সালে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (কেজিডিসিএল) আবেদন করেন। সাত বছর পেরোলেও তার বাড়িতে গ্যাস-সংযোগ পৌঁছেনি। মো. রফিক বলেন, ‘আমার বাসায় গ্যাস-সংযোগের জন্য সাত বছর আগে ২০১৫ সালে আবেদন করেছিলাম। এখন পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। আবেদন করতে সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল আমার। কবে নাগাদ বাসায় গ্যাস-সংযোগ পাবো, তা-ও বলছে না প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
আবেদনকারীদের অভিযোগ, কর্ণফুলী কর্তৃপক্ষ এসব টাকা বছরের পর বছর ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ ভোগ করছে। রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, ‘২০১৪ সালের শেষের দিকে নতুন গ্যাস-সংযোগ নেয়ার জন্য আবেদন করি। মূল লাইন থেকে সংযোগ অনুযায়ী দূরত্ব হিসাব করে। প্রথম তিন মিটার বাদে পরবর্তী প্রতি মিটার পাইপের জন্য এক হাজার ৬০ টাকা হিসাবে ডিমান্ড নোটের সঙ্গে জমা দিতে হয়েছে। এতে একেকটি আবেদনের জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কিংবা আরও বেশি টাকা জমা দিতে হয়েছে। অফিসিয়াল সব কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ আট বছরেও গ্যাসের নতুন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এসব টাকা ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ তোলা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ গ্যাস-সংযোগ দেয়া হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে চট্টগ্রামে আবাসিক বাসা-বাড়িতে গ্যাস-সংযোগ পাওয়ার জন্য প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক আবেদন করেন। তারা আবেদনের বিপরীতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (কেজিডিসিএল) জমা দেন। কিন্তু আধা যুগ পার হলেও সংযোগ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রাহকরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডকে পুনর্বিন্যাস করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এ কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকাগুলো হলো চট্টগ্রাম নগরী, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই। এসব এলাকায় মোট সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালিতে সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য খাতে। চট্টগ্রামে দৈনিক চাহিদা আছে ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। ডিমান্ড নোটের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিকে জামানত ও ফির মাধ্যমে গ্যাস-সংযোগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির গ্রাহক ঐক্য জোটের সভাপতি আলমগীর নূর, মহাসচিব এ কে এম অলি উল্লাহ হক ও মো. নুরুল আলম নামের গ্রাহক রিটটি করেন। জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইকরাম চৌধুরী বলেন, ‘২০১৫ সালের পর থেকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আবাসিক ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রেখেছে। এ কারণে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজারের বেশি গ্রাহকের আবেদন আটকে যায়। এসব আবেদনের বিপরীতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মতো গ্রাহকরা জমা দিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকরা গ্যাস-সংযোগ পেতে সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। নতুন আবেদন না নিলেও আটকে থাকা আবেদনের গ্রাহকদের মাঝে গ্যাস-সংযোগ প্রদান করার দাবি জানান তিনি।
কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইকরাম চৌধুরী বলেন, সংযোগ পাওয়ার দাবিতে আদালতে গ্রাহকের করা রিট মামলার এখন পর্যন্ত কোনও সুরহা হয়নি। সেটি এখন পর্যন্ত চলমান আছে। কবে নিষ্পত্তি হবে, তা জানা যাচ্ছে না। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন, দক্ষিণ ডিভিউশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস-সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। অনেক আবেদন জমা হয়ে আছে। গ্রাহকের করা মামলার কারণে নতুন সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। মামলাটির সুরাহা হলে এবং আদালতের কী নির্দেশনা আসে, তার ওপর ভিত্তি করে সংযোগ দেয়া-না দেয়ার বিষয় আসবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে থাকে, তাহলে সংযোগ দেয়াটাও তাদের দায়িত্ব। আর সংযোগ না দেয়ার কারণটাও গ্রাহকদের জানানোর দায়িত্ব তাদের। এত গ্রাহকের টাকা আটকে রাখার কোনও মানে হয় না। সংযোগ না দিলে টাকা ফেরত দেয়া প্রয়োজন ছিল।