একটি মোবাইলেই ৯ হাজার ৮৮৮টি অর্থ লেনদেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৭ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
একটি মোবাইলেই ৯ হাজার ৮৮৮টি অর্থ লেনদেন হয়েছে। আর এর সঙ্গে জড়িতদের তথ্য খুঁজছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুধু একজনের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্ট নম্বরে এসব অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওই এজেন্ট নম্বর থেকে বিভিন্নজনের কাছে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ৩০৯ টাকা পাঠানো হয়েছে। এমন পরিমাণের লেনদেন হয়েছে অন্তত ৪৬টি এজেন্ট নম্বর থেকে। এসব নম্বরের অবস্থান ঢাকার নবাবগঞ্জ, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চট্টগ্রামে।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে ফজলে রাব্বিকে এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে শামীমা আক্তারকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন অ্যাপস ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ডিজিটাল হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও আটজনের তথ্য পান সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। হুন্ডিগুলো হয় টিএমআই নামে একটি অ্যাপসে।
এ আটজনের মধ্যে রয়েছেন টিএমআই অ্যাপসের পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি ইতালির রোমে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে অবস্থান করা আরেক পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তার বাড়ি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ঢালকা নগরে। মিজানের স্ত্রী ঢাকার নবাবগঞ্জের মীর মিথিলা। এ ছাড়া সুমন, সবুজ, সূর্য বাবু, আসলাম খান ও সজীবসহ আরও ২০-২৫ জনের নাম পাওয়া যায়। এরা সবাই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন সাইবার পুলিশ সেন্টারের এসআই মেহেদী হাসান।
গতকালও গুলশান থানায় এক বিকাশ এজেন্টের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডিজিটাল হুন্ডির বিরুদ্ধে করা অভিযানের পর তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটির তদন্ত করছে সাইবার এবং একটি তদন্ত করছে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তবে ডিজিটাল হুন্ডির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আমাদের নজরদারিতে আছেন।’
৮ সেপ্টেম্বরই সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছিলেন, গত এক বছরে ডিজিটাল হুন্ডিতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা ইউএস ডলারে পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন। মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এসব টাকা পাচার হয়েছে।
সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ফজলে রাব্বি তাদের বলেছেন, ইতালির রোমে থাকা মিজান টিএমআই এবং টপআপটোয়েন্টিফোর ডট ইনফো নামের ওয়েব অ্যাপসে হুন্ডি লেনদেন করেন। বাংলাদেশে লেনদেন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য শামীমাকে অ্যাডমিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন নম্বরে কত টাকা ক্যাশ ইন হবে তা টিএমআই অ্যাপসের মাধ্যমে ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়। আর সেই পরিমাণ টাকা সজীব ঢাকার বান্দুরায় এনআরবিসি ব্যাংকের শাখায়, প্রাইম ব্যাংকের জয়পাড়া শাখায়, অগ্রণী ব্যাংকের নবাবগঞ্জ শাখায়, আইএফআইসি ব্যাংকের জয়পাড়া শাখায় থাকা অ্যাকাউন্টে জমা করেন। মিজানুরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাব্বি যেসব নম্বরের বিকাশে ক্যাশ ইন করতেন সেসবের তথ্য মিথিলা ও সুমনের কাছে পাঠাতে হতো।
এদিকে শামীমা জানিয়েছেন, তিনিই মূলত সমগ্র বাংলাদেশের টিএমআই অ্যাপসের হুন্ডি দেখেন। তাদের আরেক পরিচালক জাহাঙ্গীর হলেন মিথিলার বড় ভাই। টিএমআই অ্যাপসে বিকাশ প্রোভাইডারদের আইডি খোলা বন্ধসহ সব সমস্যার সমাধান তিনি করে থাকেন। ইতালিকেন্দ্রিক ব্যবহৃত টিএমআই ও টপআপটোয়েন্টিফোর ডট ইনফো নামের অ্যাপসটি ছাড়াও হুন্ডির জন্য সৌদি আরবকেন্দ্রিক ইজিক্যাশ নামে আরেকটি অ্যাপস আছে। এই অ্যাপসে সৌদিতে টাকা পাঠাতে চট্টগ্রামকেন্দ্রিক এজেন্টরা জড়িত।
জানা যায়, ইতালির প্রবাসীরা সেখানকার মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট দোকান দেওয়া বাংলাদেশিদের কাছে গিয়ে দেশে পাঠানোর জন্য ওই দেশের মুদ্রা জমা দিতেন। আর ওই এজেন্ট দোকানদাররা তা টিএমআই এবং টপআপটোয়েন্টিফোর ডট ইনফো অ্যাপসে সমপরিমাণ মুদ্রা আপ করতেন। প্রবাসীরা যার কাছে টাকা পাঠাবেন তার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিতেন। আর তা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপগুলোর মনিটরে ভেসে উঠত। এদিকে বাংলাদেশে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনাকারী এজেন্টরা তাতে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এদের মোবাইল নম্বর থেকে সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে থাকা প্রবাসীর স্বজনদের মোবাইলে টাকা পাঠিয়ে দিতেন।