ব্যয় ৫৮০ কোটি
ঋণের টাকায় বিদেশে প্রশিক্ষণে যাবেন ২০ হাজার শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৬ পিএম, ২৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫২ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশে এমনিতেই ডলার সংকট। ফলে সরকার নানা খাতে খরচ কমানোর একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি যতদিন উত্তরণ না হবে ততদিন এই ধারা অব্যাহত থাকবে। অথচ একটি মাত্র প্রকল্পের আওতায় বিদেশে প্রশিক্ষণে যাবেন দেশের ২০ হাজার ২২৫ জন শিক্ষক, এ খাতে ব্যয় হবে ৫৮০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২০৪ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার এবং সরকারি খাত থেকে ব্যয় হবে ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাতদিনের জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নেবেন ২০ হাজার শিক্ষক, এক বছরের জন্য মাস্টার্স কোর্স করবেন ১২৫ জন শিক্ষক। বাকি ১০০ জন শিক্ষক দুই সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ নেবেন। তবে কোন দেশে প্রশিক্ষণ নেবেন তা ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের শিক্ষার সঙ্গে মিল রয়েছে এমন দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া সব শিক্ষকের জন্য স্থানীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩২৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এমন ব্যয় ধরা হয়েছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিডিপি-৪) প্রকল্পের আওতায়। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ৬২৮ কোটি ১৩ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণসহায়তা থেকে ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রকল্পটির বিষয়ে অবগত করা হয়। বৈঠক শেষে প্রকল্পের বিষয়ে সার্বিক ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২৫ হাজার ৫৬১ কোটি ৩২ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ১২ হাজার ৭৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনিসেফ ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) প্রকল্পে ঋণ দেবে। এর মধ্যে শুধু এডিবি ও বিশ্বব্যাংকই ঋণ দেবে ১০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ সাল নাগাদ। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৫ নাগাদ বাড়ানো হয়।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: একীভূত ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের সব শিশুর প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা। পাঠ্যসূচিতে নির্ধারিত শ্রেণিভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক শিখন যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিখন-শেখানোর গুণগতমানের উন্নয়ন সাধন। সর্বজনীনভাবে বিস্তৃত একটি সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যা শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সমর্থ হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী সুশাসন ব্যবস্থা তৈরি, পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান রাখা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করে একটি কার্যকর, একীভূত ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা । নানা কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী সব ছেলে-মেয়েকে প্রি-প্রাইমারি এবং ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকরণ। পাঠ্যসূচিতে নির্ধারিত শ্রেণিভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক শিখন যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিখন-শেখানোর গুণগতমানের উন্নয়ন সাধন এবং সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি। একটি কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ শীর্ষক কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
অনাবাসিক ভবন নির্মাণ: অফিস ভবন এবং স্থাপনা বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। বিদ্যালয়ের চাহিদাভিত্তিক অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ ৫০ হাজারটি, চাহিদাভিত্তিক প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ১০ হাজার ৫০০টি নির্মাণ করা হবে। চাহিদাভিত্তিক বাউন্ডারি ওয়াল (গেটসহ) ১০ হাজার বিদ্যালয়ে, ওয়াশব্লক ৫৮ হাজারটি নির্মাণ করা হবে।
বিদ্যালয় ভবন মেরামত: মাইনর মেরামত প্রতি বছর ২০ হাজার বিদ্যালয়; রুটিন মেরামত প্রতি বছর ৪২ হাজার বিদ্যালয় এবং মেজর মেরামত করা হবে ৫ হাজারটি বিদ্যালয়। এছাড়া ৬১ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষককে ভাতা দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে ২০ হাজার নলকূপ স্থাপন করা হবে। কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে ৭২ হাজার ১৩০টি বিদ্যালয়ে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিডিপি-৪) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি বিধায় অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। প্রকল্পের আওতায় কিছু নতুন আইটেম যোগ হয়েছে। এছাড়া কিছু অপ্রয়োজনীয় আইটেম বাদ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো অনলাইন-অফলাইন পদ্ধতি সংযোজন করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। শিক্ষকদের গাঠনিক মূল্যায়নের ফলাফল সংরক্ষণের জন্য ডিজিটালাইজড ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।