নওগাঁয় কাঁচামরিচের কেজি ৫০ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৬ পিএম, ২১ আগস্ট,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় কমতে শুরু করেছে কাঁচামরিচের দাম। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৩১৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ২৫ হেক্টর, মান্দায় ২৩০ হেক্টর, রানীনগরে ২০০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১৭ হেক্টর, পত্নীতলায় ৩৩ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৫ হেক্টর, সাপাহারে ২৫ হেক্টর, পোরশায় ৫ হেক্টর, এবং নিয়ামতপুরে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
মোমিনপুর গ্রামের মরিচ চাষি সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। অনাবৃষ্টিতে পাতা মরা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গাছ মারা গেছে। এছাড়া ফুল ঝরে পড়ছে। এ কারণে গাছে মরিচের পরিমাণও কম হয়েছে। যখন গাছে মরিচ ছিল তখন ৮০-৯০ টাকা কেজি ছিল। আবার বাজারে যখন দাম বেশি ছিল তখন ক্ষেত থেকে মরিচ কম পাওয়া গেছে। কীটনাশক দিয়েও পাতা মরা ও ফুল পড়া রোগ দমন করা যাচ্ছে না। এখন আবার দাম কমে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
বিনোদপুর গ্রামের চাষি জালাল হোসেন বলেন, একবিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এতে মরিচের আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। যেখান সব খরচ বাদ দিয়ে পাওয়া যায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। মরিচে ভালো লাভ পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই অনাবৃষ্টি। সামান্য বৃষ্টি হলেও তেমন কাজে লাগেনি। সেচ দিয়ে গাছ টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। বাজারে সার, কীটনাশক ও তেলের দাম বেশি। এরমধ্যে মরিচের দাম কমে গেছে। শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ৮০-৯০ টাকা কেজি। পর্যায়ক্রমে বেড়ে ২০০-২২০ টাকা হয়েছিল। সপ্তাহ থেকে আবার কমে ৫০-৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এতো কষ্ট করে গাছ টিকিয়ে রাখা হয়েছে তার ওপর আবার দাম কম। হামিদপুর গ্রামের মরিচ চাষি ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। শুক্রবার ৭৪ টাকা দরে ৬৩ কেজি ও শনিবার ৫০ টাকা দরে ৭০ কেজি মরিচ বিক্রি করেছি। বিগত দিনে যে পরিমাণ মরিচ আমদানি হতো এখনো সে পরিমাণই হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দিয়েছে। অথচ টেলিভিশনের দেখছি মরিচের বাজারে আগুন। এতে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
স্থানীয় কাঁচামরিচের পাইকারি ব্যবসায়ী রায়হান আলী বলেন, এখানে সাদা মরিচের চাষ হয়। আর এসব মরিচ চট্টগ্রাম জেলায় চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন এ বাজার থেকে প্রায় ১১-১২ টন মরিচ চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। কিছুদিন আগেও মরিচ ২০০-২২০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। এখন ৫০ টাকা দিয়ে কিনছি। মোমিনপুর কাঁচা বাজার সমিতির সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে যখন অনাবৃষ্টি ছিল তখন হাটে কাঁচামরিচের আমদানি কম থাকায় দাম বেশি ছিল। প্রতি কেজি মরিচ প্রায় ২০০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন হাটে মরিচের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এ হাটে ২৫টি আড়ত আছে। এসব আড়তের মাধ্যমে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মরিচ কিনে জেলার বাইরে বিক্রি করছেন।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় বলেন, এ উপজেলায় স্থানীয় জাত বর্ষা মৌসুমে কাঁচা মরিচের আবাদ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রিম করেছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০-১২ মেট্রিক টন উৎপাদন হচ্ছে। শুরুতে অনাবৃষ্টিতে গাছের সমস্যা হলেও সম্পূরক সেচ দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। আগামী বছর প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ লক্ষ্যে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।