গ্যাস সংকটে ৩৬ দিন বন্ধ যমুনা সার কারখানা : ইউরিয়া সংকটের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১০ পিএম, ২৭ জুলাই,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৬ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের অভাবে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানা। এতে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ দেশের অন্তত ২০ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আসন্ন বোরো মৌসুমে তীব্র সার সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কবে নাগাদ কারখানা চালু হবে তাও বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ও কারখানা সূত্র জানায়, গত বছরের শেষদিকে টানা দুমাস কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে ওভারহোলিং (মেরামত) করা হয়। এর পেছনে ব্যয় হয় ২০০ কোটি টাকা। তারপর উৎপাদনে যেতে না যেতেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় গত ২৭ মার্চ সকালে সার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর কিছুদিন পর ৭ মে কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকান্ডের পরপরই কারখানার উৎপাদন আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। সবশেষ প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের কারণে ২১ জুন বন্ধ হয়ে যায় কারখানার উৎপাদন। তারপর থেকে টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কারখানা। যমুনা সার কারখানা থেকে সার নেন জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ীসহ উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার আড়াই হাজার ডিলার।
তারা বলছেন, সামনে বোরো মৌসুম। এ মৌসুমে সার উৎপাদন না হলে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরিসহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা। এদিকে কারখানা ঘিরে এর আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকানপাট, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ। গত এক মাস ধরে কারখানাটি বন্ধ থাকায় তাদের ব্যবসাতেও পড়েছে ভাটা। কথা হয় স্থানীয় নাদিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যখন কারখানা চালু ছিল তখন আমাদের হোটেলের ব্যবসাও বেশ জমজমাট ছিল। এখন কারখানা বন্ধ থাকায় মানুষের পকেটে টাকা নেই। তাই আমাদের ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে।’
তারকান্দি ট্রাক ও ট্যাংক লরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক জাগো নিউজকে বলেন, খুব দ্রুত কারখানাটি চালু করা না গেলে স্থানীয় কৃষকসহ দেশের বৃহত্তম এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে । কারখানার মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হাকিম (অপারেশন) বলেন, ‘প্রাকৃতিক গ্যাসের খুবই সংকট। ফলে আমদানিনির্ভর ছিল এ কারখানার উৎপাদন। কিন্তু সেটাও এখন করা যাচ্ছে না। তাই কতদিন কারখানা বন্ধ থাকবে তা সরকারই ভালো বলতে পারবে।
এদিকে গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯ জুলাই রাত ১০টা থেকে এই কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়। কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মইনুল হক জানান, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে নাগাদ চালু করা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে বর্তমানে কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। গ্যাস পাওয়া গেলে উৎপাদনে যাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্টরা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত সিইউএফএল কারখানা পুরোপুরি সচল রাখতে প্রয়োজন ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এ কারখানায় দৈনিক এক হাজার মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া এবং ১২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশন) প্রকৌশলী সারওয়ার হোসেন জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ১০টায় সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়। আগে সিইউএফএলে ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলে আবারও গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে।