টিসিবির পেঁয়াজে আগ্রহ নেই ক্রেতাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩০ এএম, ১২ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা, যা বাজারের দেশি পেঁয়াজের তুলনায় অর্ধেক। এরপরও ক্রেতাদের চাহিদা কম। কয়েকদিন আগেও ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন দেখা গেলেও এখন আর নেই কোনও ভিড়। অনেক স্থানেই ডেকে ডেকে পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করছেন পরিবেশকরা। হাঁকডাকে দু-একজন ক্রেতা এলেও তাদের আগ্রহ ডাল অথবা তেলে। কিন্তু পরিবেশকদের শর্ত শুনেই ফিরে যাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ না নিলে অন্য কোনও পণ্য বিক্রি করছেন না পরিবেশকরা। অর্থাৎ যেকোনও পণ্য কিনলে সঙ্গে পেঁয়াজ নিতে বাধ্য করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা এলাকার টিসিবির ডিলার মাসুদ পারভেজ বলেন, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য পণ্যের সঙ্গে পেঁয়াজও বিক্রি করার চেষ্টা করছি। পেঁয়াজ নিয়ে আমরা লোকসানে পড়ে গেছি। আর বরাদ্দের পেঁয়াজ শেষ না হলে টিসিবি থেকে অন্য পণ্য দেয়া হচ্ছে না।
আজ সোমবার বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেল ঘুরে দেখা গেল, ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট থেকে কেউ পেঁয়াজ উঠিয়েছেন তিনদিন কেউবা পাঁচদিন আগে। এরপরও বিক্রি করতে পারেননি। ফলে কারও কারও পেঁয়াজে পচন ধরেছে। অপেক্ষাকৃত ভালো পেঁয়াজ বাছাই করে তা অন্য পণ্যের সঙ্গে ‘প্যাকেজ আকারে’ বিক্রি করছেন পরিবেশকরা।
ক্রেতারা জানান, টিসিবির পেঁয়াজগুলোতে পচন ধরেছে, মানও ভালো না। অন্যদিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজের ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ফলে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা।
এদিকে, পেঁয়াজের পাশাপাশি টিসিবির ট্রাকে মাঝারি দানার এক কেজি ডালের দাম ৫০ টাকা, যা বাজারের চেয়ে ৩০ টাকা কম। পাঁচ লিটারের এক বোতল তেলের দাম ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার সাশ্রয় ১৫০ টাকার মতো। এছাড়া এখন নেই চিনির সরবরাহ। অন্যদিকে অধিকাংশ ট্রাকসেলে তেল পাওয়া যায়নি।
সেক্ষেত্রে ডালের সঙ্গে আড়াই কেজি এবং যেসব পরিবেশকের কাছে তেল রয়েছে তারা কমপক্ষে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ গছিয়ে দিচ্ছেন। এ জন্য ওই সব পণ্যও বিক্রি কমে গেছে।
রামপুরাসহ রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে কিছুটা দূরে অবস্থানকারী টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাক দেখা গেলেও ক্রেতাদের কোনও লাইন ছিল না। অলস সময় কাটাচ্ছেন পরিবেশকরা। অথচ মাত্র কয়েকদিন আগেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে কেনার জন্য বিশাল লাইন থাকত।
টিসিবির ট্রাকসেলের পাশেই রামপুরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রোকেয়া খাতুন বলেন, আগেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় ঠেলে মাত্র এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। এখন চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ কিনতে পারছি বাজারে। বাজারে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দামও কম, মানও ভালো।
এদিকে পরিবেশকদের প্যাকেজ সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এনামুল হক নামের এক ক্রেতা বলেন, জোর করে অন্য পণ্যের সঙ্গে পেঁয়াজ গছিয়ে দিচ্ছে। আমার পেঁয়াজের কোনও প্রয়োজন ছিল না। তবে তেলের জন্য পেঁয়াজ কিনতে হলো। যতটুকু পেঁয়াজ দিয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ পচা বলে মনে হচ্ছে।
প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা বাবলু মিয়া বলেন, এখান থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনেছি এতদিন। আজ অবশ্য লাইনে দাঁড়াতে হয়নি।
জানতে চাইলে আরেক ডিলার মনসুর আলী বলেন, প্রতিদিন আড়াই টন করে বরাদ্দ পাচ্ছি। কিন্তু বিক্রি হয় ৩০০-৪০০ কেজি। যা অবিক্রীত থেকে যায়, তা কয়েকদিনে বিক্রি করি। তাই বরাদ্দ পাওয়া পেঁয়াজ পুরোটা বিক্রি করতে সময় লাগছে। এ সময়ের মধ্যে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বরাদ্দের পেঁয়াজ বিক্রি না হলে টিসিবি অন্য পণ্য সরবরাহ দিচ্ছে না বলেও জানান তিনি।