বিদেশি ঋণে পরামর্শক ফাঁদ : ২১ প্রকল্পে খরচ ২,৮১৫ কোটি টাকা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৩৮ এএম, ১০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার সাধারণত নিজস্ব অর্থায়নে ও বিদেশি ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব জনবলের বাইরে কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হলে পরামর্শক সেবা কেনার প্রয়োজন পড়ে। তবে বিদেশি ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক সেবা কেনার নামে যেন লুটপাট চলছে। প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক, বিদেশি ঋণের প্রায় সব ধরনের প্রকল্পে পরামর্শক সেবা কেনা হচ্ছে। এর দামও চড়া বা অস্বাভাবিক। নিজস্ব অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবা কেনার প্রয়োজন পড়ে না, বিদেশি ঋণের সে ধরনের প্রকল্পেও পরামর্শক সেবা কেনা হচ্ছে। পরামর্শক সেবার নামে ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ বিদেশিদের কাছে ফিরে যাচ্ছে। এতে দেশের জনগণ ঋণ গ্রহণের ফলভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের ওপর বাড়ছে আসল-সুদের বোঝা।
সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া বিদেশি ঋণ ও অনুদানের নতুন এবং সংশোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২২টির তথ্য বিশ্লেষণ করে পরামর্শক সেবার এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, ২২টির মধ্যে ২১টি প্রকল্পেই পরামর্শক খাত রাখা হয়েছে। ২১ প্রকল্পের পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।
পরামর্শক খরচ রাখা ২২ প্রকল্পের মধ্যে ছয়টিতে বিশ্বব্যাংক, পাঁচটিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), তিনটিতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), তিনটিতে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), দুটিতে চায়না এক্সিম ব্যাংক, একটিতে ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি), একটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), একটিতে দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশ, একটিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), একটিতে ভারতীয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এবং একটিতে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ঋণ (দু-একটিতে আংশিক অনুদানও) দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রকল্পে যৌথভাবেও ঋণ দিচ্ছে দু-একটি সংস্থা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন মানে হলো ঋণ গ্রহণ। টাকা যখন ধার করি তখন কিছু শর্ত তারা (ঋণদাতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) চাপিয়ে দেয়। না হলে টাকা নেই, দেয় না বা দিতে চায় না। গ্রামের সুদখোররাও তাই করে। আমার ওমুক কাজ করে দিবি বা অমুকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবি, তাইলে তোরে ঋণ দিমু। গ্রামের সুদখোররা এরকম করে না? এরকম এরাও (ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান/রাষ্ট্র) করে। সুতরাং তখন তারা বলে যে, এই যে কাজের কথা বললেন, এই কাজটা আপনারা পারবেন না। আপনাদের বিদেশি কিছু বিশেষজ্ঞ দরকার আছে। এখানে দুটি কথা। এক. তাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাজে লাগিয়ে দেয়। দুই. ঋণের বড় অংশ ফেরত চলে যায় তাদের কাছে। এটা সব দুনিয়ার মানুষ জানে। তারা এটা করে পার পাচ্ছে, কারণ তাদের কিছু এজেন্ট (দালাল) আমাদের এখানেও আছে। তাদের মাধ্যমে তারা আসে। (নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী) জগৎ শেঠ, উমী চাঁদ পাইছিল না রবার্ট ক্লাইভ? এখনো তা-ই আছে। পরিষ্কার কথা।’
উত্তরণের উপায় ব্যাখ্যা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ঈমান ঠিক রাখলে, চুরিচামারি না করলে, কাজ করলে তারা আপনাআপনি সরে যাবে। তারা চীনে করতে পারে না, মিয়ানমারে পারে না, উত্তর কোরিয়ায় পারে না, রাশিয়ায় পারে না, উজবেকিস্তানে পারে না, ভেনেজুয়েলায় পারে না, কিউবায় পারে না। আমাদের এখানে কেন পারে?’
এডিবির পাঁচটি প্রকল্পের সবগুলোতেই পরামর্শক খাত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরে এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গবিন্দ বার বলেন, ‘পরামর্শকরা কী করেন, সেটা আগে জানুন। পরামর্শকরা বিভিন্ন নকশার ক্ষেত্রে, গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নলেজ প্রোডাক্ট তৈরি করে, বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি করে। এখন এমন প্রকল্প যদি হয়, যেখানে এ ধরনের কোনো ব্যাপার নেই, সেখানে পরামর্শক কেন রাখবে? যদি এমন প্রকল্প হয়, যেখানে এগুলোর দরকার আছে; যেমন ধরেন, কোন কোন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, আইনি জটিলতা, বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরি করতে হবে- সেগুলো কারা তৈরি করবে? এগুলো কি সরকারের কর্মকর্তারা তৈরি করে দেবেন? তারা তো এগুলো করেন না, তারা ম্যানেজার্স (ব্যবস্থাপক)। সব লোক তো প্রকল্পে নেই। প্রকল্পে নির্দিষ্ট লোক ধরা হয়। অন্যান্য কাজ আছে। এগুলো তো বাইরের লোক দিয়েই করাতে হবে। মাঠেঘাটে যেতে হবে, বিভিন্ন ধরনের ইমপোর্ট লাগে। সবকিছু করার লোক তো সরকারের নেইও। এজন্য পরামর্শকের দরকার হয়, এগুলো প্রয়োজনীয় নয়? পরামর্শক কেন তা মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞাসা করেন, পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দেয়, তাদের জিজ্ঞাসা করেন; তাদের তো জিজ্ঞাসা করা উচিত।’
এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে পরামর্শক খাতে খরচ করা হচ্ছে ৫৩৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংকের ছয়টি প্রকল্পেও পরামর্শক খরচ ধরা হয়েছে। তবে তারা সামগ্রিকভাবে পরামর্শক খরচ নিয়ে কিছু বলতে রাজি নয়। সুনির্দিষ্টভাবে তাদের কোনো প্রকল্প ছাড়াও কথা বলতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি।
গত ১০ মার্চ অনুমোদিত বিশ্বব্যাংকের ঋণে ‘ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে ১৭টি পরামর্শক খাতে ১৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা আমাকে জিজ্ঞাসা করার আগে কি ঢাকা ওয়াসাকে (প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা) জিজ্ঞাসা করেছিলেন? প্রজেক্টটা তৈরি করে কিন্তু সরকার ও বিশ্বব্যাংক একই সাথে। তারা বলতে পারবে কোন কোন খাতে কেন পরামর্শক নিয়েছে। প্রকল্পের নকশাটা ওয়াসাই করেছে। বিশ্বব্যাংক তো প্রকল্পের নকশা করেনি।
নিজস্ব অর্থের প্রকল্পে পরামর্শক লাগে না, বিদেশি ঋণে লাগে :
পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, নিজস্ব অর্থের প্রকল্পে পরামর্শক খরচ না লাগলেও বিদেশি ঋণের প্রকল্পে অনেক সময় অপ্রয়োজনেই পরামর্শক সেবা নেয়া হচ্ছে, যা দেখিয়ে খরচ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
আট হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্প। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে পানি সরবরাহের এতবড় প্রকল্প। এতে প্রয়োজন হচ্ছে না পরামর্শক সেবার।
অন্যদিকে বিদেশি ঋণে ২০২০ সালে দুটি পানি সরবরাহের প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পের চেয়ে ছোট (খরচের অংকে)। অথচ সেই বিদেশি ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। বিদেশি ঋণের দুটি প্রকল্পের একটি হালো ‘ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ (প্রথম সংশোধিত)’। প্রকল্পটিতে পরামর্শকের জন্য ২২ কোটি ৬৩ হাজার টাকা খরচ করা হচ্ছে। পানি সরবরাহের দ্বিতীয় প্রকল্প ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’তে পরামর্শক খাতে খরচ করা হচ্ছে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
একটি প্রকল্পের আওতায় খনন হবে আড়িয়াল খাঁ নদ :
‘পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা মহাসড়কে এক স্তর নিচ দিয়ে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ (ডাঙ্গাবাজার-ইসলামপুর লিংকসহ) (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের জন্য আলাদা খরচের প্রয়োজন হচ্ছে না। অথচ এডিবির ঋণের মহাসড়কের একই ধরনের ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে পরামর্শকের জন্য খরচ করা হচ্ছে ৫৩৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার টাকা!
ঋণের প্রকল্পে অতি মাত্রায় পরামর্শক খরচ :
উল্লিখিত চিত্রই বলে দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেয়া প্রকল্পে পরামর্শক খাতে মাত্রাতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক খরচ করা হচ্ছে। তবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাতে পরামর্শক সেবা প্রয়োজন হলেও খরচ সেই তুলনায় নগণ্য।
যেমন- বিশ্বব্যাংকের ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এটিতে পরামর্শক খাতে খরচ করা হচ্ছে ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
অথচ প্রায় একই রকমের নৌপথ খননে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ‘নরসিংদী জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়িয়াল খাঁ নদ, হাড়িদোয়া নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ, পাহাড়িয়া নদী, মেঘনা শাখা নদী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ পুনঃখনন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে পরামর্শকের দুই খাতে খরচ করা হচ্ছে পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা, যা ঋণের প্রকল্পটির পরামর্শক ব্যয়ের তুলনায় কিছুই নয়।
ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক খরচ বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এডিবি’র জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গবিন্দ বার বলেন, ‘যারা এ ধরনের (বাড়তি পরামর্শক খরচ) কথাবার্তা বলছে, তারা না জেনে এসব বলছে। এগুলো না জানার ফল। অত্যধিক নয়। এগুলোর প্রত্যেকটার রেট আছে। কোন ধরনের ইম্পোর্টে কত ধরনের কত টাকা লাগবে, সেটার একটা বাজারদর আছে, সেই অনুযায়ী করা হয়। এখানে অত্যধিকের কোনো ব্যাপার নেই। এটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই হয়। আমরা ইচ্ছামতো ছাপাই তা নয়, এটা তো সরকারের ডকুমেন্ট। সরকারের বিভিন্ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আছে। মন্ত্রণালয় করে, পরিকল্পনা কমিশন করে। মানে এগুলো যাচাই-বাছাই হয়। তারপর এটা অনুমোদন হয়। বাজারদরের ভিত্তিতেই করা হয়। এমনি এমনি নয়। এগুলো প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়া। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই হচ্ছে।’
এক প্রকল্পে ১৭ পরামর্শক খাত :
‘ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এআইআইবি ও বিশ্বব্যাংক। পয়ঃনিষ্কাশনের এ প্রকল্পে ১৭টি পরামর্শক খাতে ১৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এমন প্রকল্পেও যদি ১৭টি খাতে পরামর্শক লাগে, তাহলে সরকারের প্রকৌশলী/বিশেষজ্ঞদের কাজ কী? কেবল এ প্রকল্পই নয়, অনেক প্রকল্পেই এমন একাধিক খাতে পরামর্শক সেবা গ্রহণ করা হয়।
‘ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে পরামর্শক খাত ১৭টি, খরচ ১৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পটিতে যে ১৭টি খাতে পরামর্শক সেবা কেনা হচ্ছে তার মধ্যে কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর ডিজাইন রিভিউ অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন খাতে ৪০ কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট খাতে ৩০ কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর রিভিউয়িং/প্রিপারেশন অব ডিডি অ্যান্ড বিডি অব সুয়ারেজ সিস্টেমস অ্যাট উত্তরা ক্যাচমেন্ট এরিয়া খাতে ২১ কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যা সিনিয়র প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট (স্থানীয়) খাতে তিন কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যা ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট খাতে তিন কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যান অডিট ফার্ম খাতে দুই কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যান ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট/প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার খাতে তিন কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফ্রম অ্যান ইন্টারন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট খাতে তিন কোটি, টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স ফর ইমপ্লিমেন্টেশন অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্টেকহোল্ডারস এঙ্গেজমেন্ট স্ট্রাটেজিস খাতে পাঁচ কোটি, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর স্ট্রেন্থেনিং অব জিআইএস ফর ঢাকা ওয়াসা খাতে ৮৫ লাখ, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর স্ট্রেন্থেনিং অব এমআইএস ফর ঢাকা ওয়াসা খাতে ৮৫ লাখ, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর স্টাডিজ অন দ্য ইম্পেক্ট অব ড্রেইনেজ, সলিড ওয়াস্ট অ্যান্ড রিলেটেড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসপেক্টস অন স্যানিটেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচারস ফর ইমপ্রুভড এনভায়রনমেন্ট অব ঢাকা সিটি খাতে চার কোটি ১৯ লাখ, টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স টু এক্সপ্লোর অ্যাডভ্যান্স ফাইন্যান্সিং অপশনস খাতে দুই কোটি ১০ লাখ, কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর এনগেজিং এনজিওস ফর কানেশন প্রোমোশনস, ওয়াশ এডুকেশন খাতে ১০ কোটি এবং কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস ফর আপডেটিং অব বিলিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়ার ফর ঢাকা ওয়াসা খাতে চার কোটি ১৯ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির নকশা করেছে ওয়াসা। তারাই এসব খাতে পরামর্শক সেবা চেয়েছে।
ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক খরচের আরও চিত্র : সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালের বিদেশি ঋণের বাছাই করা ২২টি প্রকল্পের মধ্যে যে একটিতে পরামর্শক খরচ ধরা হয়নি, সেটি হলো ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন, জামালপুর (প্রথম সংশোধিত)’। প্রকল্পটিতে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে ভারতীয় ক্রেডিট লাইন থেকে।
বাকি ২১টি প্রকল্পে পরামর্শক খরচ রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো- বিশ্বব্যাংকের ঋণে ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রাম (উইকেয়ার) ফেজ-১ : রুরাল কানেক্টিভিটি, মার্কেট অ্যান্ড লজিস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে (আরসিএমএলআইআইপি)’ পরামর্শক খরচ ৯৯ কোটি ৩৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
এডিবির ঋণে ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে পরামর্শক খাতে খরচ করা হচ্ছে ৫৩৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার টাকা।
এডিবি’র ঋণের ‘আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।
‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় হচ্ছে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে চীনের এআইআইবি। প্রকল্পটিতে পরামর্শক সেবায় খরচ হচ্ছে ৬৭ কোটি ২৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
‘জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এডিবি। প্রকল্পটি পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ৯৯ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খরচ হচ্ছে ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
‘ডিপিডিসি’র আওতাধীন এলাকায় উপকেন্দ্র নির্মাণ ও পুনর্বাসন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন এবং স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থার প্রবর্তন’ প্রকল্পে ঋণ-অনুদান দিচ্ছে এএফডি ও ইইউ। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ২৪ কোটি ৭৯ লাখ দুই হাজার টাকা।
‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) : (রাজউক অংশ) (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পের পরামর্শক খরচ ৩০৮ কোটি ৪৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
‘ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এআইআইবি ও বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটিতে ১৭টি পরামর্শক খাতে ১৩৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে।
‘ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং (প্রথম সংশোধিত)‘ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে এইচএসবিসি বাংলাদেশের ঋণে। প্রকল্পটির পরামর্শক খরচ ২৬ কোটি ৮১ লাখ ২১ হাজার টাকা।
‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ১১৯ কোটি ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
‘এস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস এডিএন সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস) (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে ইডিসিএফ। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খরচ ২৬ কোটি ৩২ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
এডিবি’র ঋণে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স এমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স (এডিবি-জিওবি)’ প্রকল্পে পরামর্শক খাতে খরচ হচ্ছে ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
‘কোভিড-১৯ এমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস (বিশ্বব্যাংক-জিওবি)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খরচ ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।
‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটির পরামর্শক খরচ করা হবে ৩০ কোটি টাকা।
‘মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পটিতে পরামর্শক খরচ ৭৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
ভারতীয় ঋণে হচ্ছে ‘মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প। এতে পরামর্শক খরচ ৮২ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণে হচ্ছে ‘ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এতে খরচ হচ্ছে ২২ কোটি ৬৩ হাজার টাকা।
‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে জাইকা। প্রকল্পটির পরামর্শক খরচ ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
আইডিএ ও এআইআইবি’র ঋণে বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্প। এতে পরামর্শক খরচ ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।