ডিজিটাল অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে পরামর্শক ব্যয় ১৯১ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৭ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ডিজিটাল অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯১ কোটি টাকা। তবে এর আগে এই খাতে আরও বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল। কারণ ব্যয় কম হোক বা বেশি হোক তাতে যায়-আসে না, সরকার ডিজিটাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চায়। এ জন্য হাতে নেয়া হচ্ছে ‘এনহ্যানিসং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল ইকোনমি (ইডিজিই)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের পকেটেই যাবে ১৯১ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৮২ কোটি ২৮ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৫৩ কোটি ৮১ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩ হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নেয়া হবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। জানা যায়, ৩ হাজার ৮৬৩ দিন কাজ করবে পরামর্শক ফার্ম। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আবার ২ হাজার ৩৭৬ জন কাজ করবে ব্যক্তি পরামর্শক। তাদের পেছনে খরচ হবে ৭৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এছাড়া করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ২৫টি আইসিটি যন্ত্রাংশ ক্রয়, সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জাম ও যানবাহন ক্রয় এবং ৩ জনের বেতন-ভাতাদি দেয়া। এছাড়া প্রশাসনিক খরচ, উৎসব ভাতা ও সম্মানী প্রদান এবং সরবরাহ খাতে ব্যয় হবে।
জানা যায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে সারা দেশের ৬৪ জেলা এবং সব সিটি করপোরেশনে ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৫০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
একনেক সভার কার্যপত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি এবং বিকাশের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়নের সহায়তা দেয়া। এছাড়া ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বৃদ্ধি করা হবে ডিজিটাল সক্ষমতা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারের জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পটি ডিজিটাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি ডিজিটাল লিডারশিপ তৈরি করা হবে। উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে ২০ হাজার যুবক ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল ইকোনমিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক (সিএ অপারেশন ও নিরাপত্তা) তারেক এম বরকত উল্লাহ বলেন, অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করেই পরামর্শক খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে। এটা প্রয়োজন। কেননা দেশের সবচেয়ে বড় ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন করা হবে। এগুলোতে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম চলবে। এগুলো থেকে যেসব ইনোভেশন (উদ্ভাবন) বের হবে সেগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে। এছাড়া চীনের কোম্পানিগুলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। আমাদের এখানে কেন আসছে না। এর কারণ অনুসন্ধানসহ সমস্যা সমাধানে কাজ করবে পরামর্শকরা।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক এমকে মুজেরী বলেন, এত পরামর্শক কেন লাগবে তার একটি মূল্যায়ন হওয়া উচিত ছিল। এছাড়া যে কোনো প্রকল্পেই আর কিছু হোক আর না হোক পরামর্শক, বিদেশ সফর, গাড়ি ও আসবাবসহ নানারকম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। এদিকেই বেশি আগ্রহী সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে পরামর্শক ব্যয় ধরার কোনো নীতিমালা বা পরামর্শ নিয়ে কি আউটকাম পাওয়া গেছে তার কোনো মাপকাঠিও তৈরি হয়নি। ফলে এসব ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা ঋণের টাকা। সুদসহ পরিশোধ করতে হবে সরকারকেই।