পোশাক খাতে ওমিক্রন আতঙ্ক শঙ্কায় গার্মেন্ট মালিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৩ এএম, ৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪২ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
পোশাক খাত নিয়ে নানা শঙ্কায় দিন কাটছে গার্মেন্ট মালিকদের। ওমিক্রন আতঙ্কে ভুগছেন তারা। যদিও ওমিক্রন বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নিয়ে তেমন শঙ্কা নেই। দুই বছরের মাথায় করোনার নয়া আঘাতে বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের ধাক্কায় এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্মেলন। নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইউরোপের দেশগুলো। এ অবস্থায় দেশের পোশাক খাতে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে এক হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। ওমিক্রন আতঙ্কে এর ব্যত্যয় ঘটলে গার্মেন্ট খাতের অবস্থা শোচনীয় অবস্থায় পড়বে।
গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পোশাকের পর্যাপ্ত ক্রয় আদেশ রয়েছে। সেগুলো দ্রুত রপ্তানির জন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। তবে এই পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে নতুন করে ক্রয় আদেশ না নেয়ার প্রবণতার ফলে শঙ্কিত তারা। এতে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এরই মধ্যে পোশাকের অর্ডার কমে গেছে। বিদেশি ক্রেতারা নতুন করে অর্ডার নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এছাড়া নতুন ক্রয় আদেশগুলো নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে পোশাক খাতে আবারও বিপদ নেমে আসবে।
তারা বলছেন, বিশ্ববাজারে করোনার নতুন আঘাতে আবারও শঙ্কায় পড়েছে ইউরোপসহ সব দেশ। যার প্রাথমিক প্রভাবে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন স্থাগিত হয়েছে।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রথম ঢেউয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা ৩১৫ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল, যা দেশের অন্তত ১ হাজার ১৩৬টি কারখানার ওপর প্রভাব ফেলেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে আবার অর্ডার ফিরেছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা থাকলেও প্রভাব এখনো রয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে যদি ইউরোপীয় দেশগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাহলে এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘যদিও এখন পর্যন্ত তেমন প্রভাব আমরা লক্ষ করিনি। অনেক দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অনেক আউটলেট তাদের বন্ধ। তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে এখনও একেবারে ড্যামেজ হয়ে যায়নি। তবে আমাদের অর্ডারগুলো সেøা হয়ে গেছে। আগে অনেক অর্ডার আসতো এখন অনেক কমে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেটা তারা পর্যবেক্ষণ করছে। তবে নতুন ক্রয় আদেশ নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। চিন্তার বিষয় হলো- যদি নতুন ক্রয় আদেশগুলো বাতিল হয়ে যায়, তাহলে আমাদের জন্য বিপদ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যে অর্ডারগুলো প্লেস হয়েছে সেগুলো দ্রুত ডেলিভারি করার চেষ্টা করছি আমরা। এগুলো সময়মতো ডেলিভারি করতে পারলে বাঁচি। ওমিক্রনের কারণে যেকোনো সময় এসব অর্ডার স্থগিত হলে নতুন আরেকটা সংকট দেখা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বায়ারদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। তারাও পরিস্থিতি অবজার্ভ করছে। লকডাউনের কারণে অর্ডার ডেলিভারির ফ্লো বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা তৈরি হবে।’
রপ্তানিমুখী শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও আমাদের কারখানাগুলো অতিমারির ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের আগমনে বৈশ্বিক অর্থনীতি এরই মধ্যে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। গত বছরের মতো এই বছরেও বড়দিনের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন চালিয়ে নিতে হুমকির মধ্যে পড়বে।’
সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওমিক্রণের কারণে বিভিন্ন দেশে যে সতর্কতামূলক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা বিশ্ব বাণিজ্যকে ব্যাহত করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের আরও সাবধান হতে হবে। আগের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে হবে। কারণ মেজর বায়াররা বিভিন্নভাবে প্যানিক সৃষ্টি করেন বা অর্ডার ডেফিসিয়েন্সি তৈরি করেন। এমনকি অর্ডারে অনেক সময় ডিসকাউন্টও চেয়ে বসেন বা ক্যানসেল করেন। তো এসব সমস্যা যেন না হয় সে জন্য আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, করোনার আগের ধাক্কায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক দেশই ধাক্কা খেয়েছে। অনেক দেশ সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে ওমিক্রনের কারণে অর্থনীতি আবারও একটা ধাক্কা খেতে যাচ্ছে।