নতুন জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য - বাণিজ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০০ এএম, ২৮ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৫ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালায় ‘ইমপোট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ২য় দিনে ‘বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে আমাদের এখনই সচেতনভাবে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে নতুন জিএসপি প্লাস পেতে প্রয়োজনীয় সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে তিনি সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
তিনি বলেন, ইউরোপের দেশসমূহ বাংলাদেশের বাণিজ্যের অন্যতম ব্যবসায়িক পার্টনার এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল ইউরোপের সাথে।
তিনি জানান, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপের সাথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুল অব অরিজিন-এর ক্ষেত্রে কঠিন নীতিমালার মুখোমুখি হতে হবে এবং তা মোকাবিলায় ইউ’র দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সাথে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষর করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইউরোপের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ইপিজেডসমূহে বিশেষ করে ওষুধ, এপিআই এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান রিজওয়ান রাহমান। বাংলাদেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়ন এবং রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজতকরণে ইউরোপের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ব্যবস্থপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি ড. রুবানা হক এবং ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
বিজিএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, তবে ইইউ কর্তৃক নতুন জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আমাদের কমপ্লায়েন্সের ওপর আরো বেশি হারে মনোযোগী হতে হবে এবং একই সাথে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রস্তাব করেন এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে আরো বেশি হারে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান।
ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খাতে আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণা কার্যক্রম বাড়নো প্রয়োজন, পাশাপশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়বে ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।
তিনি জানান, তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ ৩য় স্থানে রয়েছে, তবে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে তা রপ্তানি বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বীকৃত হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি না থাকায়, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ২৩ মার্কিন ডলারের ফাস্ট মুভিং কনজিওমার প্রডাক্টস্ (এফএমসিজি) পণ্য গ্রহণ করে থাকে এবং বিশেষ করে এদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বাজারকে আরো সম্ভাবনাময় করেছে। বাংলাদেশ হতে মুনাফা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয় বলেন, আর্থিক খাতের জন্য বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, এখাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে তা সফলভাবে মোকাবিলা করা গেলে মুনাফা অর্জন সম্ভব। গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, যা গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তাবৃন্দ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।