পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৩৪৯ শতাংশ : চার বছরেও প্রকল্পের অগ্রগতি নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ২০ অক্টোবর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
একটি চলমান প্রকল্পের ব্যয় চার গুণ বা ৩৪৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। টাকার হিসাবে ১৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা থেকে প্রকল্পের ব্যয় এক লাফে বেড়ে হচ্ছে ৬৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর (৬৭/৪, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন (১ম সংশোধন) প্রকল্পের আওতায় এ প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন প্রস্তাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পুনর্বিবেচনা ছাড়া এমন প্রকল্প অনুমোদন করা সমীচীন হবে না বলে জানানো হয়েছে কমিশন থেকে। এছাড়া চার বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেও প্রকল্পের বাস্তব ও আর্থিক অগ্রগতি নেই। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন, কৃষি বিভাগ, কার্যক্রম বিভাগ, অর্থবিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। মূল প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ না থাকলেও সংশোধিত প্রস্তাবে ২৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণ কাজে মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ব্যয় ছিল ২২ কোটি টাকা। নতুন করে এ খাতে মোট ব্যয় বাড়ছে ১০২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ফলে এ খাতে মোট ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ খাতের ব্যয় অত্যধিক মন্তব্য করে তা যৌক্তিক পরিমাণে কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে এর আগেও পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়েছে। নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। তবে কেন ব্যয় বাড়ছে সেই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। সামনে হয়তো আরও পিইসি সভা হবে। ব্যয়ের বিষয়টি আমরা আবারও দেখবো। এর পরই সংশ্লিষ্টরা বসে একটি সিদ্ধান্ত নেবো। অন্যদিকে বাপাউবো জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা নিন্ডিত করতে বাঁধের উপর সোলার স্ট্রিট লাইট, নির্মিত বাঁধের উপর এইচবিবি সড়ক নির্মাণ, বাঁধের উপর বিটুমিনাস কার্পেটিং, ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বিজিবির বে ও এমজি বাঙ্কার, ডিউটি পোস্ট, সেন্ট্রি পোস্ট প্রতিস্থাপন করা হবে। এজন্য মূল প্রকল্প থেকে ৩৪৯ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মূল প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীসময়ে প্রকল্পটি ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে অক্টোবর ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে।
পরে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ৩৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকার সংস্থান রেখে ১ম সংশোধন প্রস্তাব আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। যার ওপর ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে মোট ৬৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত পুনর্গঠিত ডিপিপি ২০২১ সালের ২৫ মে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। যা মূল অনুমোদিত ডিপিপির চেয়ে ৩৪৯ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। কতিপয় নতুন কিছু কাজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে বলে দাবি করেছে বাপাউবো। বাপাউবো জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের শরণার্থীদের চলাচল ও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ রোধ হবে। মিয়ানমারের নাগরিকদের বিষয়ে প্রণীত জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা নিন্ডিত করার লক্ষ্যে ও মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদকসহ অন্য চোরাচালান প্রতিরোধকল্পে সহায়তা দেওয়া হবে সীমান্তরক্ষীদের। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ৬১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন ও পুনর্র্নিমাণ করা হবে। মূল ডিপিপি থেকে সংশোধিত ডিপিপিতে ১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ বাড়ছে। ৩৩টি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ও ৪৮টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণ করা হবে, যা মূল ডিপিপির চেয়ে ৪০টি বেশি। ৬টি আরসিসি বক্স আউটলেট নির্মাণ করা হবে, যা মূল ডিপিপিতে ছিল ৪৬টি। প্রকল্পের আওতায় ২৫ কিলোমিটার পানি সংরক্ষণ খাল পুনরায় খনন করা হবে। এছাড়া বাঁধের উপরে ১ হাজার ৬শটি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে যা মূল প্রকল্পে ছিল ২০৬টি। ৫১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার বাঁধের উপর করা হবে বিটুমিনাস কার্পেটিং। এছাড়া তিনটি ব্রিজ, কালভার্ট, ২০টি স্থানে বিজিবির বে ও এমজি বাঙ্কার, ডিউটি পোস্ট, সেন্ট্রি পোস্ট প্রতিস্থাপনসহ জেটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করা হবে ২৬ হেক্টর ভূমি। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কক্সবাজার) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। প্রকল্পের পরিধি ও পরিসর বেড়েছে। প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন কিছু কাজও যুক্ত হয়েছে। মূলত এসব কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে। ১৪১ কোটি ৬৫ লাখ থেকে ৬৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ার বিষয়ে প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, প্রকল্পটি যখন অনুমোদন হয় তখন রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল না। এখন রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে এসেছে। ফলে প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নতুন আইটেম। এসব কারণেই সময়-ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।