অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:৩২ এএম, ২৫ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থান সংকুচিত হওয়া এবং আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেও বাড়ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। গত (২০১৯-২০) অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বর্তমানে আমানত সুদের হারসহ অন্য সব ক্ষেত্রে সুদের হার কমে গেছে। এজন্য নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার প্রধান কারণ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। করোনাকালে গত কয়েক মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে তারা সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছেন। ফলে রেমিট্যান্সের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হচ্ছে।’
আহসান এইচ মুনসুর বলেন, ‘ব্যাংকে আমানত রাখলে আগে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যেত। বর্তমানে তা কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সঞ্চয়পত্রে এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র বিক্রির সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া না হলে মাসে ২০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতো’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোব) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, আগস্টে ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে মাত্র ৮২৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মাত্র চার মাসে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। বিপরীতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে ৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নিট বিক্রির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। যার পরিমাণ ১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬২৩ কোটি টাকা, পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২২৯ কোটি টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকার।
সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনার শুরুতে গত এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমে আসে। গত এপ্রিল মাসে মোট ৬৬১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় তার প্রায় দ্বিগুণ ১ হাজার ২৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নিট বিক্রি ছিল ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এরপর গত মে মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের শেষ মাসে জুনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি মে মাসের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেড়ে হয় ৯ হাজার ৩২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমতে শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে আবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সঞ্চয় অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৬৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এই ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে।