চালের দাম সপ্তাহে বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা : অন্যান্য জিনিসেরও দাম বৃদ্ধি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৩৪ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ১০:৫৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
চালের দাম আরও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহে চালের দাম আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিল মালিকরা দাবি করছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এদিকে বাজারে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এদিকে সবজির ভরা মৌসুমে বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে শাক-সবজির। নিত্যপণ্যের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষসহ নিম্ন আয়ের মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, এখন আমন মৌসুমে মিলগুলো ধানের দাম বৃদ্ধির কথা বলে টানা চালের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। কিছু মিল সঠিকভাবে চাল সরবরাহ না করে পাইকারদের জানাচ্ছেন, তারা ধান পাচ্ছেন না। এসব কারণে বাজারে চালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। চালের এই দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত শিগগিরই মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধান করা। প্রয়োজনে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির সুযোগ দেয়া। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে এসব পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বর্তমানে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়, এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ থেকে ৬০ টাকা। এখন বাজারে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি মানের চাল, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং দুই সপ্তাহ আগে ৪৮ থেকে ৫০ ছিল। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা ছিল, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বা সরু চালের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর মোটা বা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
মিরপুর-১ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে অনেক বেশি বেড়েছে। বড় বড় মিলের ব্র্যান্ডের চালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কোম্পানিও চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম আবারও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে। দেশি নতুন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও পুরাতন পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা। নতুন দরে ভোজ্যতেল বাজারে ছেড়েছে কোম্পানিগুলো। আগের সপ্তাহের চেয়ে লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকায়। আর খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১০৫ টাকা। পাম সুপার তেলের লিটার ৯৫ থেকে ৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ডিমের দাম কমলেও এখন আবার হালিতে দুই টাকা বেড়েছে। আগে ফার্মের ডিমের হালি ২৮ থেকে ৩০ টাকা ছিল, এখন তা ৩০ থেকে ৩২ টাকা। কেজিতে পাঁচ টাকা কমেছে আলুর দাম। এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আগের সপ্তাহের মতো কম দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি।
এদিকে কিছুটা কমার পর সপ্তাহ না ঘুরতেই আবারও রাজধানীর বাজারগুলোতে আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। কুয়াশার কারণে বাজারে আলু-পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা ও শালগমের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রায় এক মাস ধরে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাকা টমেটো ও বরবটির দাম এখনো বেশ চড়া। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে কিছুটা কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমেছিল। এর আগে পুরাতন আলুর কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। অপরদিকে মাসখানেক আগে একশ টাকার ওপরে কেজি বিক্রি হওয়া নতুন আলুর দাম কয়েক দফা কমে গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় নেমে এসেছিল। তবে নতুন করে দাম বেড়ে এখন নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। হঠাৎ করে আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, পুরাতন আলুর পাশাপাশি বাজারে এখন নতুন আলুও পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে আসা নতুন আলুর আকারও বেশ ভালো। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কুয়াশা থাকায় ঢাকায় আলুর গাড়ি কম আসছে। ফলে নতুন আলুর সরবরাহ কমেছে। আর বাজারে এখন নতুন আলুর চাহিদা বেশি। এ কারণেই দাম বেড়েছে। কুয়াশা কেটে গেলে আলুর দাম আবার কমে যাবে।
এদিকে আলুর মতো ভোগাচ্ছে পেঁয়াজও। দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তিতে রাখা পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তা এক সপ্তাহের বেশি স্থির হয়নি। গত সপ্তাহে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকায় নেমেছিল, তার দাম বেড়ে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আগের মতো ৩০ থেকে ৪০ কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। আলুর মতো পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়েও একই ধরনের কারণ দেখান কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নোয়াব আলী। তিনি বলেন, পুরাতন পেঁয়াজের পাশাপাশি এখন বাজারে নতুন পেঁয়াজও আসছে। সেই হিসেবে দাম কমার কথা। কিন্তু কুয়াশার কারণে ফেরিঘাট ট্রাক-মাল নিয়ে আটকে থাকছে। যে কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। তবে খুব বেশি দিন এ অবস্থা থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে আমরা আশা করছি। মালিবাগ হাজীপাড়ার আলু-পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আড়তে হঠাৎ করেই আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। নতুন আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এখন আলু-পেঁয়াজের এমন দাম বাড়বে আমরা ধারণাও করতে পারিনি। দাম বাড়লেও আড়তে নতুন আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। মুলা ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি পাওয়া যাচ্ছে। ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বড় লাউ। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, উস্তের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বেশিরভাগ সবজির দাম কমলেও এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও বরবটি। পাকা টমেটোর কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, সবজির দাম নিয়ে ক্রেতাদের যে আক্ষেপ ছিল, তা এখন দূর হয়ে গেছে। বেশিরভাগ সবজি এখন ক্রেতারা অল্প দামে কিনতে পারছেন। এদিকে সবজির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। অনেকে সবজি বিক্রি করে খরচের টাকা ওঠাতে পারছেন না। তাই সবজির দাম কমায় এক শ্রেণির মাঝে স্বস্তি ফিরলেও, যারা চাষ করেন তাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে।