১৮৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন দুদকের মামলায় আসামি কেয়া কসমেটিকস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৬ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৯ পিএম, ১১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
প্রায় ১৮৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৯৬ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচ মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. শফি উল্লাহ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ২৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলাগুলোর এজাহার সূত্রে জানা যায়, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। যা যাচাই-বাছাই করে ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১৩৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার ২৪৫ টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক। যা অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবদুল খালেক পাঠান, তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তাদের নামে পৃথক পাঁচটি সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদক সচিব বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি। তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসামি আবদুল খালেক পাঠান তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪৪৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৭ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু যাচাইয়ের সময় প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে মোট ৪৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৪২৪ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তিনি ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।
অন্যদিকে তার ১৯৯৮-৯৯ করবর্ষ থেকে সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে ৫২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৬ টাকা মূল্যের সম্পদের রেকর্ডপত্র পাওয়া গেছে। ওই সম্পদের বিপরীতে খালেক পাঠানের গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৩৯৫ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৫১ টাকা। অর্থাৎ ১৩৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার ২৪৫ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং অসাধুভাবে অর্জন করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক। যে কারণে তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে আবদুল খালেক পাঠানের স্ত্রী ও কেয়া কসমেটিকসের পরিচালক মিসেস ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬৩ হাজার ২৮৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে দুদকের অপর মামলায়। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৩ জুন দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করে দুদক ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনে অভিযোগ এনেছে। একইভাবে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক ও আব্দুল খালেকের ছেলে মো. মাসুম পাঠানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৫ টাকার সম্পদের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। মাসুম পাঠান ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন। অন্যদিকে আব্দুল খালেক পাঠানের মেয়ে ও কেয়া কসমেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস খালেদা পারভীনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৬১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ অর্থাৎ অবৈধভাবে অর্জিত ২ কোটি ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ১৮০ টাকার সম্পদের মালিকানার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একইভাবে তার অপর মেয়ে ও কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক মিসেস তানসীন কেয়ার নামে ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় পঞ্চম মামলাটি করে দুদক। এছাড়া তানসীনের ঘোষিত সম্পদ বিবরণীতে ২৫ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে দায়েরকৃত মামলায়। পাঁচ মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪ (২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আব্দুল খালেক পাঠান ও ছেলে-মেয়েসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। যদিও পরে তিনি জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে আব্দুল খালেক পাঠানকে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক হারুন অর রশীদ।