সেই বিজিএমইএ ভবন এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৯ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হাতিরঝিলে বহুল আলোচিত বিজিএমইএ (তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সংগঠন) ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার কাজ অবশেষে শেষ হয়েছে! আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও হাতিরঝিল এলাকায় বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ১৬তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ এ ভবন এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে হাতিরঝিলে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয় গত বছরের ২২ জানুয়ারি। তৎকালীন গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন।
কাজ শুরুর পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ভবনটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার কথা থাকলেও মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার কার্যক্রম চলায় কাজ বিলম্বিত হয়।
ভবনটি ভাঙার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফোরস্টার গ্রুপের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ঘোষণা না এলেও অবৈধ এ ভবনটি ভাঙার কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভবনটির ১৬তলা থেকে নিচতলা পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন ভবনটির বেজমেন্টের স্থাপনা অপসারণের কাজ চলছে।
দুই লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুটের বিজিএমইএ ভবনটিতে ছিল তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অফিস। বিলাসবহুল অ্যাপারেলস ক্লাবে সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্তোরাঁ, সভাকক্ষ এবং একটি বড় আকারের মিলনায়তন ছিল। কিন্তু এখন সে স্থানে তাকালে মনে হবে, যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশের ভবন এটি, যেন বোমা মেরে কিংবা রকেট লাঞ্চার ছুঁড়ে ভবনটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শুধুই ভেঙে ফেলা ভবনের ইট, পাথর আর মাটির স্তূপ।
গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলা ভবন থেকে ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। মাসখানেক আগেও বিজিএমইএ ভবনে প্রবেশপথ অর্থাৎ কারওয়ানবাজার মাছের আড়তের বিপরীত দিকের গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের সার্বক্ষণিক প্রহরা দেখা যেতো। এখন সে দৃশ্যের চিহ্নমাত্রও নেই। উৎসুক মানুষ খোলা গেট দিয়ে অবাধে প্রবেশ করে ভবনটির ধ্বংসস্তূপ দেখছেন এবং পরস্পর এ নিয়ে আলোচনা করছেন। ভবনটি ভেঙে ফেলায় ভবনের উত্তর পাশ দিয়ে ঝিলের পানি চলাচল করতেও দেখা গেছে।
২০০৬ সালে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০১১ সালে এক রায়ে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হলে আপিল বিভাগেও সে রায় বহাল থাকে। এরপর ভবন ভাঙতে কয়েক দফা সময় নিয়ে প্রায় সাত বছর পার করে দেশের পোশাক মালিকদের শীর্ষ এ সংগঠনটি।
সবশেষ আদালতের দেয়া সাত মাস সময়সীমা শেষ হয় ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল। এর তিন দিন পরই ১৫ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরাতে একদিন সময় বেঁধে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সে মোতাবেক ভবনটিতে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও অফিস প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়। এরপরই ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।