আটার কেজি ৪০ টাকা, অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৭ এএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার নিত্যপণ্যের বাজারে আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে তেল, চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ সবজিও। কিছু কিছু মসলার দামও ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। বাজারে তেল, ডাল ও চিনির দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকা করে বেড়ে গেছে। এদিকে চালের দাম আগে থেকেই বাড়তি। প্রধান প্রধান এসব পণ্যের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেল-চিনির আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছেন। এই দামের লাগাম টানা দরকার। কারণ সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে মিল মালিকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। এদিকে চালের দামে লাগাম লাগেনি এখনও। চালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবার বেড়েছে আটার দাম। প্রতিকেজি আটার দাম এখন ৪০ টাকা। বেড়েছে চিনির দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ চিনির দাম বেড়েছে ১৮০ টাকা। প্রতিকেজি চিনি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে আগেই। দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বাদ যায়নি মসুর ডাল, ডিম, মাছ ও মাংসের দামও। এক কথায় অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে নিম্নমানের সেদ্ধ চালের কেজি এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা। উন্নত মানের সেদ্ধ চালের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আমদানিসহ নানা উদ্যোগ, কারসাজি করা ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল, তাদের বিরুদ্ধে জরুরি আইনে মামলা করাসহ নানা সিদ্ধান্ত, নানা হুমকি ধমকিতেও কমেনি চালের দাম। বেড়েছে আটার দামও। প্যাকেটজাত প্রতিকেজি আটা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। সয়াবিন তেলের লিটার ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। হঠাৎ করে বেড়েছে চিনির দাম। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ টাকা দরে। প্রতিকেজি মসুর ডালের দাম ৯৬ থেকে ১২০ টাকা। এসবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজি, মাছ ও মাংসের দাম। চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাবি, কৃষকরা বেশি দামের আশায় ধান মজুত করে রেখেছে। এতে ধানের বাজারে সরবরাহ কমেছে, যে কারণে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। ফলে বেশি দামে ধান কিনলে কম দামে, চাল বিক্রির সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে গমের দাম। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে আমদানিকারকরা বলছেন, ব্রাজিলের তপ্ত আবহাওয়ায় গমের উৎপাদন কমেছে। করোনায় বেচা-বিক্রি কম হবে বলে কানাডা ও ইউক্রেনে গমের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন সেখানকার কৃষকরা। অপর দিকে সারাবিশ্বের করোনা সংক্রান্ত বৈরি পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। ফলে গমের দাম বেড়েছে। গমের দাম বাড়লে আটা, ময়দা, সুজির দাম বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, একই কারণে বেড়েছে চিনির দাম। ৫২ টাকা কেজি দরের চিনি এখন ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে ভোজ্যতেলের বাজার আকাশ ছুঁয়েছে, তা সবারই জানা বলে জানিয়েছেন তেল পরিশোধনকারী মিলমালিক কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ডিজিএম মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক হারে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। ব্রাজিলের আবহাওয়ার কারণে গমের উৎপাদন কমে গেছে। করেনার কারণে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন কানাডা ও ইউক্রেনের কৃষকরা। ফলে গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থির। এই অস্থিরতা নিরসনের ওপর নির্ভর করছে আটা, ময়দার দাম কমার বিষয়টি।
সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বাড়া বা কমার বিষয়টি নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর। এখানে আমাদের কিছুই করার থাকে না। সমগ্র বিশ্বই এখন একটি ভিন্ন রকমের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই করোনার কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, মজুত উভয়ই কমেছে। এর ওপর বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে পণ্যের মূল্যের ওপর। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন-বিএইচএফআইসি বলছে, বেসরকারি পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে চিনির দাম বাড়িয়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা ছিল। এখন তা ৭৫ থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। এ কারণে দেশেও বাড়তি। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন- গত কয়েক দিনে খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বিক্রেতাদের সংগঠন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানান, দেশে এখন কোনও পণ্যেরই ঘাটতি নেই। তবুও বাড়তি উৎপাদন খরচ ও বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হঠাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনিসহ বাড়ছে সব ধরণের পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন উৎপাদনকারীরা। তালতলা বাজারের একরাম হোসেন বলেন, আমরা যারা নিম্ন-মধ্যবিত্ত, তারা প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় খুবই কষ্টে আছি। এমনিতেই লকডাউন পরিস্থিতির পর হাতে টাকা-পয়সা নেই, এর মধ্যে বাজারে আসলো দামের খড়গ। বিশেষ করে চাল-তেলের দাম খুবই অস্বস্তিকর পর্যায়ে উঠেছে। রাজধানীর রহমতগঞ্জ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি নেছারউদ্দিন জানিয়েনে, বিশ্বের ডালের বাজার এখন খুবই উত্তপ্ত। সর্বত্রই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির কোনও তো কোনও সুযোগ নাই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত এক বছরে চাল আমদানির এলসি খোলার হার বেড়েছে ৩ হাজার ৩৫৬ শতাংশ। যা যেকোনও সময়ের তুলনায় পরিমাণটি রেকর্ড। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও তা মাছের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। সব ধরনের মাছের দামই এখন চড়া। মাছের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাপ বেড়েছে সবজি, মাংস ও ডিমের দাম।