গরিবের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরের পাঁচ জেলায় : রংপুর ও রাজশাহীর হাল
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ১১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০১:০৫ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে প্রায় ২৯ শতাংশ হয়েছে। এর মানে হলো রাজশাহী অঞ্চলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি। রংপুর বিভাগে মোট আটটি জেলা আছে। ছয় বছরের ব্যবধানে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাটের দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ। কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে। বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি, ২-৩ শতাংশের মতো দারিদ্র্য কমেছে। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে ২০১০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত আছে। তবে জেলাওয়ারি দারিদ্র্যের বেশ উত্থান-পতন হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় দারিদ্র্য বেশ কমেছে, আবার কোনো জেলায় দারিদ্র্য বেশ বেড়েছে। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।
আবার কমতির হিসাবে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলায় প্রায় ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে দারিদ্র্যের হার এখন ২০ শতাংশ। এ ছাড়া এই বিভাগের অন্য জেলা নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাটে ৩-৪ শতাংশীয় পয়েন্ট দারিদ্র্য কমেছে।
সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে, কম নারায়ণগঞ্জে : কুড়িগ্রাম জেলায় মানুষের বড় অংশই নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারে না। আবার দৈনন্দিন চাহিদা, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বস্ত্র-এসবেও খরচ করার সুযোগ কম। এই জেলার দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ। জেলার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের হার ৭৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে কোথাও ৬৪ শতাংশের নিচে দারিদ্র্যের হার নেই।
অন্যদিকে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম, ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ এই জেলার ৯৭ শতাংশের বেশি অধিবাসী দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করে। স্থানভেদে এই জেলার দারিদ্র্যের সর্বোচ্চ হার সাড়ে ৪ শতাংশ; সর্বনিম্ন দশমিক ৬ শতাংশ।
খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ অনুযায়ী গত ছয় বছরে দারিদ্র্যের সার্বিক হার সাড়ে ৩১ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। অতিদারিদ্র্যের হারও কমেছে। ২০১৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২০ লাখ। সেই হিসাবে দেশে ৩ কোটি ৯৩ লাখ দরিদ্র মানুষ আছে।
মূলত ধনী-গরিব নির্বিশেষে আয় বৃদ্ধির কারণেই সার্বিক দারিদ্র্য কমেছে। এ দেশের একটি পরিবারের গড় আয় ছয় বছরের ব্যবধানে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। এখন একটি পরিবারের গড় আয় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। তবে এই আয় বৃদ্ধির দৌড়ে গরিবের চেয়ে ধনীরাই বেশি এগিয়ে আছে। অর্থাৎ আয়ের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য। যেমন দেশের সব মানুষের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশই করে ওপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী মানুষ। ছয় বছর আগে তাদের আয়ের পরিমাণ ছিল মোট আয়ের ৩৫ শতাংশের মতো। অন্যদিকে এখন মোট আয়ের মাত্র ১ শতাংশের সমান আয় করে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ। ছয় বছর আগেও এর পরিমাণ ছিল মোট আয়ের ২ শতাংশ।