মোটা চাল এখন ৫২ টাকা কেজি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৫ এএম, ১৪ আগস্ট,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৩ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানীর মানিকনগর বিশ্বরোড এলাকার মুদি দোকানি ইউসুফ আলী।
আজ শুক্রবার তিনি মোটা চালের কেজি বিক্রি করলেন ৫২ টাকা। তার কাছ থেকে ১০৪ টাকা দিয়ে ২ কেজি মোটা চাল কিনলেন সেলিম উদ্দিন। যিনি একই এলাকায় কখনও দিনমজুরের কাজ করেন, আবার কখনও ভ্যানে মৌসুমি ফল ও সবজি বিক্রি করেন। সেলিম জানালেন, করোনা আসার আগে তিনি চিকন মিনিকেট ছাড়া অন্য কোনো চাল কিনতেন না। করোনা আসার পর তার সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। এখন তার আগের মতো আয় নেই। সংসারই চলে না। গত দেড় বছর ধরে মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করলেও এখন এই চাল কিনতেও কষ্ট হয়।
মুদি দোকানি ইউসুফ আলী জানালেন, তিনিও এখন মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করেছেন। কিন্তু এই মোটা চালের দাম চলে গেছে নাগালের বাইরে।
শুধু সেলিম উদ্দিন বা ইউসুফ আলী নয়, তাদের মতো একটি শ্রেণি এখন নতুন করে গরিব হয়ে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। যদিও দেশে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দাম কমতির দিকে। কিন্তু দেশের বাজারের চিত্র এর উল্টো।
বাজারে সরু চালের মধ্যে মূল্যনির্দেশক বা ‘বেঞ্চমার্ক’ হলো মিনিকেট। সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সরু মিনিকেট চালের কেজি এখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকার আশপাশে। আর সাধারণ মিনিকেট চাল ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
রাজধানীর কাওরানবাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বেশকিছু দিন ধরে নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে চালের দাম নিয়ে হতাশার কথা শুনছেন গত এক বছর ধরে।
এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়ায় ওএমএসের চাল কিনতে ভিড় বাড়ছে মানুষ। কারণ সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে চালের দাম বেশি। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৫০ টাকা বা এর আশপাশে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার বা এর কাছাকাছি।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু দিন আগে ইরি মৌসুম শেষ হয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর এ সময় চালের দাম কম থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি মজুত কমে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ব্যতিক্রম। তারা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই এবার চালের দাম বাড়ছে।
এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। গত বছর এ সময় মোটা চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর গত এক মাসে এই চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো।
শুধু মোটা চাল নয়, সব ধরনের চালের দামই ব্যাপক চড়া। সরকারি হিসাবেই মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
রাজধানীর কাপ্তানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মুবারক হোসেন বলেন, ‘গত শুক্রবার মোটা চালের দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫২ টাকা। অর্থাৎ মোটা চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই টাকার মতো বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিআর-২৮ চাল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের দাম বেশি। তার মতে, ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওইসব দেশে চালের দাম কমেছে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে চালের মজুত রয়েছে ১৩ লাখ টন।
এমন পরিস্থিতিতেও গত বৃহস্পতিবার চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। সেদ্ধ ও আতপ চাল এই শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবে। বাসমতী ও সুগন্ধি চাল আমদানির ক্ষেত্রে আগের শুল্ক বজায় থাকবে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ছাড় দেয়া শুল্ক হারে চাল আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা।