বিদেশে বাড়ছে দেশি কোম্পানির বিনিয়োগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ১০ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:১৭ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। বিদেশের মাটিতে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এরইমধ্যে দেশের উদ্যোক্তারা বিদেশে গড়ে তুলছেন বেশ কিছু কোম্পানি। নতুন করে কোম্পানি খোলার অনুমতি পেতে যাচ্ছে আরও ছয় প্রতিষ্ঠান। এখন বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কভাবেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ এখনও বিদেশে বিনিয়োগ নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষ ব্যবস্থায় ২০১৩ সালে প্রথম একটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ সংশোধন করে শর্তসাপেক্ষে বিদেশে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেস টু কেস ভিত্তিতে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিদেশে অবস্থিত শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউজ পরিচালনার জন্যও পুঁজি নেয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, নতুন করে আরও ছয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক পর্যায়ে বিদেশে প্রায় ৬৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ (সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী) বিনিয়োগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠান হলো- নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রাণ ফুডস লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, এমবিএম গার্মেন্টস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও রেনাটা লিমিটেড। সম্প্রতি দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন পর্যালোচনায় গঠিত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির এক সভায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে থেকেই বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। নতুন করে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়ার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখছে। এরই মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বৈঠক হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন অনুমতি পাওয়া নাসা গ্রুপভুক্ত স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এজে সুপার গার্মেন্টস সৌদি আরবে একটি খেজুর প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে। ‘সিটি অব ড্রিমস ফর ডেটস’ নামের কোম্পানিটি ৫০ লাখ ডলার (সাড়ে ৪২ কোটি টাকা) বিনিয়োগের মাধ্যমে সাবসিডিয়ারি হিসেবে স্থাপন করতে চায় এজে সুপার গার্মেন্টস।
এ প্রসঙ্গে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এ কোম্পানি থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেজুর রফতানি হবে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ভারতে একটি সাবসিডিয়ারি স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্পায়ু পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানিটি ২০ লাখ ৬২ হাজার ডলার (প্রায় ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা) বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতে পিনাকল ফোরএস নামে একটি সাবসিডিয়ারি স্থাপনের অনুমতি চেয়েছে। ২০১৮ সালে হংকংয়ে বিএসআরএম (হংকং) লিমিটেড নামে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্থাপন করেছে বিএসআরএম। এজন্য কোম্পানিটি ইআরকিউ হিসাব থেকে ৫ লাখ ডলার মূলধন বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের অনুমতি চেয়েছে। ইআরকিউ হিসাব থেকে ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের জন্য আবেদন করেছে এমবিএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এমবিএম গার্মেন্টস লিমিটেড। প্রস্তাবিত কোম্পানির নাম এমবিএম সিঙ্গাপুর লিমিটেড। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বর্তমানে ৭১টি দেশে পণ্য রফতানি করছে। মার্কিন বাজারে রফতানির জন্য নিজস্ব ইআরকিউ হিসাব থেকে ১ লাখ ডলার বিনিয়োগের জন্য আবেদন করেছে কোম্পানিটি। প্রস্তাবিত সাবসিডিয়ারি কোম্পানির নাম হবে ইনসেপ্টা ফার্মা ইউএসএ লিমিটেড। অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডে রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ারল্যান্ড) লিমিটেড নামে একটি সাবসিডিয়ারি গঠনের অনুমতি চেয়েছে রেনাটা লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গতবছর বিদেশে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৩২ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। গতবছর দেশের উদ্যোক্তারা বিদেশে নিট বিনিয়োগ করেছেন ১ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়। এরপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, আকিজ গ্রুপসহ ১০টি প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে বিনিয়োগ করেছে। বাইরের যে দেশগুলোতে বিনিয়োগ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এস্তোনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।
জানা গেছে, এরই মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপকে ইথিওপিয়ায় পোশাক কারখানা স্থাপনে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কেনিয়ায় ইস্পাত কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েছে বিএসআরএম স্টিল। স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়েছে সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগের অনুমতি। আকিজ গ্রুপ মালয়েশিয়ার রবিন রিসোর্সেস কেনার অনুমোদন পেয়েছে। সামিট গ্রুপেরও বিনিয়োগ রয়েছে সিঙ্গাপুরে।