বাণিজ্য ঘাটতিতে রেকর্ড : আমদানি ব্যয় বেড়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০৭ এএম, ৫ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৫ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
করোনা শুরু হওয়ার পর দেশের রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। ফলে প্রতি বছর যে হারে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় এবার তা হয়নি। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি থেকে গত অর্থবছরে (২০২০-২১) যে পরিমাণ আয় হয়েছে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে গেছে। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরে রফতানি আয় যেভাবে বাড়ার কথা তেমনটা বাড়েনি। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনা শুরুর দিকে বৈদেশিক বাণিজ্য একপ্রকার বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। পরে শুরু হলেও খুব বেশি গতি পায়নি। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্ট খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। গার্মেন্ট পণ্যে মূল বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার প্রকোপ বেশি ছিল। অন্যদিকে করোনার কারণে আমদানি বাণিজ্য যে স্থবির হয়ে পড়েছিল তাতেও এখন গতি এসেছে। ফলে বেড়েছে আমদানি। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, রফতানি আয় কমে যাওয়ার কারণেই আবার বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। করোনার কারণে বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আমদানি ব্যয় করোনার শুরুতে কমলেও এখন তা আবার বেড়ে গেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। আগামীতে আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে দেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৭৮৮ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৬৮ কোটি ডলার। সে হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।
এ সময়ের মধ্যে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানি ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় আমদানি চাহিদাও বেড়েছে। তাই আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। তবে দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি যতটা বেড়ে যাওয়ার কথা ততটা বাড়েনি। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ।
এদিকে সেবা খাতেও বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। করোনাকালীন মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। তবে আমদানি-রফতানি বেড়ে যাওয়ায় বিমার খরচও বেড়েছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। গেল অর্থবছরের এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর তা ছিল ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ঘাটতি বেড়েছে ৪৩ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকায় দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতিও বেড়েছে। গত অর্থবছরে প্রথম ৯ মাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়। অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে ৩৮০ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে, সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ওভারঅল ব্যালেন্স ৯২৭ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তার আগের বছর এ পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) ঋণাত্মক অবস্থায় অর্থবছর শেষ হয়েছে।
গেল অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার থেকে প্রায় ২৭ কোটি ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবে বিদেশ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আসে এবং সেখান থেকে বিদেশে চলে যাওয়া অংশটুকু বাদ দিয়ে ব্যালান্স হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগসহ (এফডিআই) অন্যান্য উেসর লেনদেন হিসাব-নিকাশ করে সার্বিক হিসাব প্রস্তুত করা হয়। গত মে মাস পর্যন্ত সার্বিক হিসাবে বাংলাদেশের ব্যালান্স ছিল ৮৫১ কোটি ডলার। গত বছরের মে মাসে এ ব্যালান্স ছিল ১৩৯ কোটি ডলার। মহামারির মধ্যেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে। গেল অর্থবছরে ৩৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচ্য সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৭৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১২৭ কোটি ডলার।