বেসরকারি ঋণ ১৪.৮ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২০ এএম, ৩০ জুলাই,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
করোনা মহামারির সঙ্কট মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য (২০২১-২২) সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে। এবারও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়ার্ধে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ঋণের মোট অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ : চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ ‘ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছে। কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের জন্য ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের জন্য ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকসমূহ ২৫ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার ৯৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষিঋণ পেয়েছেন। যার মধ্যে ব্যাংকসমূহের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৬ লাখ পাঁচ হাজার ৯৪৭ জন নারী প্রায় নয় হাজার ২৮৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ পেয়েছেন। একই অর্থবছরে ২২ লাখ ৪৫ হাজার ৫১২ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ লাখ ৬৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার সাত হাজার ৭৯৬ জন কৃষক প্রায় ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ পেয়েছেন। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষিঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছু বিষয় সংযোজিত হয়েছে।
এ নীতিমালার নতুন নিয়মগুলো হলো :
>> সোনালি মুরগি ও মহিষ এবং গাড়ল পালনের জন্য ঋণ দেয়া;
>> কৃষিঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৮ শতাংশ করা;
>> একরপ্রতি ঋণসীমা কৃষকদের প্রকৃত চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি বা হ্রাস করা;
>> মাছ চাষে একরপ্রতি ঋণসীমা বৃদ্ধি করা এবং ব্যাংক কর্তৃক বিতরণকৃত ঋণের তদারকি অধিকতর জোরদার করা।
করোনা ভাইরাসে আর্থিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে চলতি মূলধনভিত্তিক কৃষি খাতে মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে গত অর্থবছরের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। স্কিমটির মেয়াদ জুন ২০২১ মাসে সমাপ্ত হয়েছে। আলোচ্য স্কিমের আওতায় তফসিলি ব্যাংকসমূহ চার হাজার ২৯৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এছাড়াও সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে ব্যাংকসমূহ কৃষক পর্যায়ে চার শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য গত অর্থবছরের ২৭ এপ্রিল নোটিশ জারি করা হয়। এ স্কিমটির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়েছে। আলোচ্য সার্কুলারের আওতায় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জুন ২০২১ পর্যন্ত চার হাজার ৮৮০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।