মরিচের দাম বেড়ে ৩ গুণ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:১০ এএম, ১০ জুলাই,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৫ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গত বৃহস্পতিবার সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি। ঢাকার বাইরের ব্যাপারীরা ১২ টাকা কেজি দরেও মরিচ বিক্রি করেছেন।
দেশের মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে কারওয়ানবাজারে আনার খরচ ও মুনাফা যোগ করে পাইকাররা। যদি এই দামে বিক্রি করেন তবে তারা কিনেছেন নিশ্চয়ই আরো কম দামে। সেই কম দাম থেকেও কমে মরিচ বিক্রি করেন কৃষকরা।
গতকাল মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় মরিচের আড়ত বরঙ্গাইল হাটে সবচেয়ে ভালো মানের মরিচ কেনাবেচা হয়েছে ১৫ টাকা কেজি। এই হাটে ১০ টাকা কেজিতেও মরিচ পাওয়া গেছে। মানিকগঞ্জ শহরের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে। এখানকার শিবালয়, ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ হয়েছে। ঢাকার বাজারের মরিচের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয় এখান থেকে।
অথচ কারওয়ানবাজারের এই সস্তার মরিচ মাত্র দুই হাত ঘুরেই দুই থেকে তিন গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে। গতকাল কারওয়ানবাজারের অদূরে মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আড়াই শ গ্রাম কিনতে ক্রেতার দিতে হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। একই দাম যাত্রাবাড়ী খুচরা বাজারেও। অথচ এখানে সবজির বৃহৎ আড়ৎ রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি কিনে ব্যাপারীরা কারওয়ানবাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে আড়তদারের মাধ্যমে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে পাল্লা দরে কিনে নেন।
ক্রেতারা বলছেন, একসঙ্গে এক কেজি করে খুব কম ক্রেতাই কাঁচামরিচ কেনেন। বেশিরভাগই আড়াই শ গ্রামের মধ্যে কিনে থাকেন। ফলে খুচরা বিক্রেতারা বাড়তি দামের বোঝাটা চাপিয়ে দিতে পারেন খুব সহজেই। শুধু কাঁচামরিচ নয়, প্রায় সব সবজিতেই এমনটা হচ্ছে। ভোক্তা যে দামে কেনেন, তার খুব সামান্যই কৃষক পান।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা যমুনা ভান্ডারের আড়তদার মো. দিপু বলেন, দেশের কোথাও কোথাও সবজির ক্ষেত ডুবে গেছে, কোথাও অতিবৃষ্টির কারণে পানি জমে সবজি পচে গেছে। ফলে সবজির সরবরাহ কম। এতে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বাড়ছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো কাঁচামরিচ। মরিচের ক্ষেত ডুবে যাওয়ার আগেই কৃষক ক্ষেত থেকে তুলে ফেলছেন। অনেকে অন্য ফসল করবেন বলে তুলে ফেলেছেন। এতে মরিচের দাম কমে গেছে।
গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে পটোল, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, বেগুন, চিচিঙাসহ বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এসব সবজি ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। করলা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। টমেটো ও চায়না গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আলু পাওয়া যাচ্ছে ২৫ টাকা কেজিতে। লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, সব ধরনের সবজির দামই পাইকারিতে বাড়ছে। ফলে খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তিনি বলেন, ‘গত বুধবার ১৫ কেজি দেশি করলা কিনেছিলাম ৬০০ টাকায়। একদিনের ব্যবধানে গতকাল কিনেছি ৭২০ টাকায়। সে হিসাবে কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ৪৮ টাকা। এরপর কয়ালি, গাড়িভাড়া, দোকানভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলে ৫৫ টাকা দাঁড়ায়। ফলে ৬০ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। এভাবে সব সবজির দামই বাড়ছে।’
এদিকে দাম কামার কথা থাকলেও বাজারে মিলছে না কম দামের ভোজ্য তেল বোতলজাত সয়াবিন। আগের বাড়তি দামের তেলের বোতলই রয়েছে বেশির ভাগ দোকানে। ফলে ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দাম কমানোর বিষয়টি।
বিক্রেতারা বলছেন, ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো কম দামের বোতলের অর্ডার নিতে এলেও আমরা দিতে পারছি না। কারণ খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমে আসায় বোতলজাত সয়াবিনের চাহিদা কমেছে। এছাড়া দাম কমবে বলে বাড়তি দামের তেল বিক্রি হচ্ছে কম। এতে বেশি দামের তেল নিয়ে কিছুটা বিপাকেই পড়েছেন বলে জানান তারা।
খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি পর্যন্ত দামে। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে চার টাকা কমিয়ে ১৪৯ টাকা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন মিল মালিকরা। এছাড়া বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মসুর ডাল, চিনি। বড় দানার মসুর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, চিনি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।