বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪১ এএম, ১৯ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৫ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে যখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে, তখনও নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির অজুহাতে অধিকাংশ সবজির দাম আবার বেড়ে গেছে। এছাড়া দাম বেড়েছে সয়াবিন, তেল, ডিম, মুরগি, আলু, আদা ও রসুনের। বিক্রেতারা বলছেন, বাধ্য হয়েই তাদের বাড়তি দামে অধিকাংশ পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ক্রেতারা বলছেন, আয় কারও বাড়ছে না, ফলে বাধ্য হয়ে সঞ্চয় ভেঙে তাদের সামাল দিতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাচ্ছি আমি।’
রাজধানীর মানিকনগর এলাকার গোলাম কিবরিয়া জানান, করোনার কারণে ও জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তার ব্যবসা এখন অনেকটাই ছোট করতে হয়েছে। ঢাকা থেকে অনেকেই চলে গেছেন, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমছে না। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর সয়াবিন তেলের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে গেছে গত কয়েক মাস ধরে। নতুন করে দাম বেড়েছে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের। বর্তমানে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা। দুইদিন আগেও এই সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী, দুইদিনের ব্যবধানে এই সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে ৭ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। টিসিবি’র তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরের তুলনায় পামঅয়েলের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। খোলা পামওয়েলের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। সুপার পামওয়েলের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রায় এক মাস ধরে বাজারে ডিমের দাম বেড়েই চলেছে। এক মাস আগে ২৮ টাকা হালি ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা হালি দরে। গত সপ্তাহে যে ডিমের দাম ছিল ৩৫ টাকা, আজ সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা হালি।
টিসিবি’র হিসাবে, গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশের বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে। তবে প্রতি বছরই এ সময়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায়। এছাড়া অনেকে ফার্ম ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। আবার মুরগির খাবারের দাম বাড়তি। সবকিছু মিলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে লাল লেয়ার মুরগি আগের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। এদিকে গত সপ্তাহে তেজপাতার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এক সপ্তাহ আগে যে তেজপাতার দাম ছিল ১১০ টাকা কেজি, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। টিসিবি’র হিসাবে গত এক সপ্তাহে তেজপাতার দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। একইভাবে আদার দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে আদার দাম ছিল ১২০ টাকা কেজি, সেই আদা আজ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি। আর এক সপ্তাহ আগে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া রসুন (আমদানি) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া এক হাজার ১০০ টাকা কেজি দরের লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ টাকা কেজিতে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আলুর দাম এক লাফে ২৫ টাকা হয়েছে। আলুর দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের মতো পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। মানভেদে শসার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাঁজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা, পেঁপে, কচুর লতি, লাউ, উস্তের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।