বাজেটের পরই বাজারে আগুন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:২৭ এএম, ৯ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাজেট উপস্থাপনের এক সপ্তাহও হয়নি। এরই মধ্যে তিন দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম।
আজ মঙ্গলবার নতুন করে বেড়েছে অন্তত ১০টি পণ্যের দাম। ৩ জুন বাজেট উপস্থাপনের পর আরও দুই দফায় বেড়েছিল বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩ টাকা বেড়ে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিন আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। অথচ বাজেটের আগের দিন এই পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ টাকা। শুধু পেঁয়াজই নয়, গতকাল নতুন করে বেড়েছে সয়াবিন, ডিম, রসুন ও দেশি আদার দাম। বাজেট পেশের আগেই দাম বেড়েছিল সয়াবিনের। তবে বাজেটের পর দিন বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা।
একদিন আগে অর্থাৎ সোমবার থেকে বেড়েছে ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম। ১২০ টাকা কেজি ব্রয়লারের এখন ১৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজেটের আগের ৩০ টাকা হালি ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। বাজেটের আগে ১০০ টাকা কেজি দেশি আদা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। বাজেটের আগে বিক্রি হওয়া ৬০ টাকা কেজি রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। ৫ লিটার বোতলের সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। গত সোমবার যে সয়াবিনের বোতল ৬৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই ৫ লিটারের বোতল গতকাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকায়। এছাড়া ১০০ টাকা কেজি মসুর ডালের দাম এখন বেড়ে হয়েছে ১০৫ টাকা।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গাজর ও মাশরুম আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজর, মাশরুম, কাঁচামরিচ, টমেটো, কমলা ও ক্যাপসিকামের ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া বাজেটে শিল্প-লবণ আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত করা মাংস আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধি ও ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এ দুটি পণ্যের দামও বাড়তে পারে। এসব পণ্যে এখন পর্যন্ত বাজেটের প্রভাব খুব একটা না পড়লেও বাজারের চিত্র বলছে, গত ৫-৬ দিনের ব্যবধানে বাজারে অন্তত ১২টিরও বেশি পণ্যের দাম বেড়েছে। যদিও সেটি বাজেটের প্রভাব নয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ক্রেতারা বলছেন, করোনার কারণে আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। তাদের প্রত্যাশা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর অতিপ্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমবে। অস্বস্তিতে থাকা মানুষের মধ্যে একটু স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাত মসজিদ বাজার, বাসস্ট্যান্ড বাজার, কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজারে এমনটি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন আগেই। বাজেট উপলক্ষে সয়াবিনের বাড়তি দামের বোতল বাজারে ঢুকেছে।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজারের চাল ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বলেন, বাজেটের কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চালের দাম যেটুকু কমেছিল বাজেটের পর সেটা আগের দামে ফিরে গেছে। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা।
পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মো. রাসেল শিকদার বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। সব দোকানে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবাই ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দামে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করছে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, ভালো মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। বাজেটের আগে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৫ টাকা কেজিতে। এই চাল বাজেটের আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। একইভাবে ২৮ ও ২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। এই চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এছাড়া ৪৬-৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজাম চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন বলেন, ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ হুট করে ৫০ টাকা হয়ে গেল। পেঁয়াজের সঙ্গে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে। ডিমের দাম, মুরগির দামও বাজেটের পর বেড়েছে। বেড়েছে সবজির দামও।
সবজি ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন বলেন, লম্বা বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়েছে একদিনে। ২৮ টাকায় কিনে ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। ৪০ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ৪০ টাকার শসা বিক্রি করছি ৫০ টাকায়। খরচসহ আগে লাউ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা পড়তো। বিক্রি করতাম ৪৫ টাকায়। সেটা খরচই পড়েছে ৪৪ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন চাল বাজারে উঠলেও মোকাম থেকেই চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গোপীবাগ এলাকার চালের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল বাসার বলেন, প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। পরিবহন খরচ আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় এখন চালের দাম বেশি। তার মতে, নতুন চাল বাজারে আসার পরও চালের দাম বাড়তি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপন করেন। বাজেটে চাল, ডাল, তেলের ওপর নতুন করে কর আরোপ করেননি। বরং কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্যের বিষয়ে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে ডাল, পেঁয়াজ-রসুন এবং ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিকই বেড়েছে।
বাজারের চিত্র বলছে, রাজধানীতে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই টাকা থেকে তিন টাকা। আটা-ময়দার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই টাকা। একইভাবে বেড়েছে গরুর মাংস, মাছের দাম। উল্লেখ্য, বাজেট ঘোষণার পর মুড়ি, সাবান, ব্রয়লার মুরগি, সিলিন্ডার গ্যাস ইত্যাদি পণ্যের দাম কমার কথা থাকলেও কোনো পণ্যের দাম কমেনি।